বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের বেতন | বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা

যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) এর মধ্যে অনেক গুলো ক্যাডার ক্যাটাগরি রয়েছে যার মধ্যে প্রশাসন ক্যাডার অন্যতম।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার

প্রশাসন ক্যাডারকে এডমিন ক্যাডার ও বলা হয়। সাধারণত অন্যসব ক্যাডার এর চেয়ে প্রশাসন ক্যাডার এর ক্ষমতা ও সম্মান বেশি হয়ে থাকে। তবে প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয়ের উপর যোগ্য হতে হবে।

আপনি যদি ভেবে থাকেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হবেন। তাহলে আপনি কেন প্রশাসন ক্যাডার বেছে নিবেন? প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য যে সকল যোগ্যতা প্রয়োজন সেগুলো আপনার মধ্যে আছে কি না! এ ছাড়াও প্রশাসন ক্যাডার এর কাজ ও বেতন সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।

সকল প্রশ্নের উত্তর আমাদের আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। প্রশাসন ক্যাডার সম্পর্কে আপনি না জানলে আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কি

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার

সবার প্রথমে চলুন জেনে নেই প্রশাসন ক্যাডার আসলে কি? ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন একটি সার্ভিস এর নাম হলো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস। মূলত এই অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস কে বর্তমান সময়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার বলা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের সকল প্রশাসনিক কাজ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, বিভাগীয় কমিশন, সচিব ইত্যাদি প্রশাসন ক্যাডারদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণদের বিসিএস এডমিন ও বলা যায়।

আশা করি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কি সেটা সহজে বুঝতে পেরেছেন। তবে, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য আপনাকে যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া এবং রিস্ক ফ্রি ব্যবসা

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার যোগ্যতা – প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা

প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা

প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য আপনার দুটি যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। যা হলোঃ

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • শারিরীক যোগ্যতা

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি আপনাকে শারিরীক ভাবেও  যোগ্য হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবর্তনশীল এটা নির্ভর করবে নিয়োগের উপর নির্ভর করে। যেটা বিসিএস এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য করা থাকবে।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে শিক্ষাগত যোগ্যতা – ২০২৩ সালের বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর ০৪ বছরের শিক্ষা সমাপনী ডিগ্রি অথবা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।

প্রার্থীর সমগ্র শিক্ষা জীবনে একাধিক ৩য় বিভাগ বা সমমানের জিপিএ থাকলে তিনি যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। অর্থ্যাৎ আপনি যদি প্রশাসন ক্যাডার হতে চান তাহলে আপনার শিক্ষা জীবনে একটির বেশি যদি ৩য় বিভাগ থাকে তবে আপনি শিক্ষাগত ভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের শারিরীক যোগ্যতা – শারিরীক যোগ্যতা নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে –

  • সর্বনীম্ন ৫ ফুট উচ্চতা থাকতে হবে।
  • ওজন সর্বনীম্ন ৫০ কেজি।

নারীদের ক্ষেত্রে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য শারিরিক যোগ্যতা –

  • উচ্চতা সর্বনীম্ন ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি থাকতে হবে।
  • ওজন থাকতে হবে সর্বনীম্ন ৪৪ কেজি।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারগন অনেক ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে। প্রমোশন ও আবাসন সুবিধা অন্য ক্যাডারদের চেয়ে বেশী। বেশিরভাগ প্রশাসন ক্যাডারের নিয়োগ হয় সচিবালয়ে। সরকারি ভাবে বাড়ি ও গাড়ি পাওয়া যায়। ক্যাবিনেট সচিব হওয়ার সুযোগ থাকে।

বিভিন্ন ধরণের সরকারি কাজে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়। স্থানীয় পর্যায় গুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার ক্ষমতা পাওয়া যায়। বিদেশে বিভিন্ন ধরণের ট্রেনিং ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকার সকল খরচ বহন করে।

তবে প্রশাসন ক্যাডারে কাজের চাপ অনেক বেশি থাকায় সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে বিভিন্ন কাজ করতে হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক স্থানে বেশি দিন কর্মস্থল থাকে না ট্রান্সফার হয় সবচেয়ে বেশি প্রশাসন ক্যাডারে। প্রশাসন ক্যাডারে নিজ জেলাতে প্রাথমিক অবস্থায় চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই তবে কিছু বছর পরে নিজস্ব বিভাগে ট্রান্সফার হওয়ার সুজোগ পাওয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব এর সুযোগ সুবিধা ও বেতন কত টাকা

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতি

সবচেয়ে বেশি কাজের বৈচিত্র্য দেখা যায় প্রশাসন ক্যাডারে। মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায় নীতিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি হয়। সহকারি কমিশনার, উপসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সিনিয়র সচিব, জেলা ও উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার ইত্যাদি পদ গুলোর মধ্যে পদোন্নতি হওয়ার সুযোগ থাকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দাপ্তরিক পদ গুলো চেয়ারম্যান এর পদোন্নতি পাওয়া যায়।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের বেতন

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের বেতন

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের বেতন পদক্রম অনুযায়ী হয়ে থাকে। তবে সকল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার গণ জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৯ম গ্রেডে বেতন পান। ৯ম গ্রেডে বেতন হয় ২২ হাজার টাকা এটা হলো মূল বেতন তবে বেতনের সাথে বাড়ি ভাড়া যুক্ত হয়। (যদি জেলা শহর পর্যায় নিয়োগ হয় তাহলে মূল বেতনের সাথে ৪০%, ঢাকা বিভাগে ৫০% ও অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে ৪৫% বাড়ি বাড়া যুক্ত হয়)।

মূল বেতনের সাথে চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই একটি ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয় যার ফলে মূলত বেতন বেড়ে ২৩ হাজার ১০০ টাকা হয়। এর সাথে মাসিক চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ টাকা, একটি সন্তানের ক্ষেত্রে শিক্ষা সহায়তা ৫০০ টাকা দুটি থাকলে ১০০০ টাকা ও অন্যান্য উৎসব ভাতাসহ সরকারি সকল ভাতা পাওয়া যায়।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কাজ

প্রশাসন ক্যাডারের দায়িত্ব নির্ভর করে পদ অনুযায়ী। যে পদে নিয়োগ হবে সেটার উপর কাজ নির্ভর করে। সাধারণত একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর কাজ হলো – পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের কাজের দায়িত্ব থাকে।

পর্যায়ক্রমে প্রশাসনিক সকল কাজের দায়িত্ব গুলো একজন প্রশাসন ক্যাডার পালন করেন। এক্ষেত্রে পদোন্নতি এর সাথে সাথে কাজের পরিবর্তন হয়। যেহেতু একটি দেশের সকল কিছুই নির্ভর করে প্রশাসনিক কাজের উপরে। তাই এখানে নির্দিষ্ট ভাবে কাজ নেই একজন জেলা প্রশাসক, কমিশনার ইত্যাদি পদ গুলোতে সরকারি অনেক ধরণের দায়িত্ব পালণ করতে হয়।

আরো পড়ুনঃ সরকার অনুমোদিত অনলাইন ইনকাম সাইট | বিশ্বস্ত অনলাইন ইনকাম সাইট

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার পদক্রম

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার পদক্রম

সাধারণত প্রশাসন ক্যাডারের পদক্রম দুই ভাবে করা হয়। সচিবালয়ে ও মাঠ প্রশাসন পর্যায়। নিচে দুটো পদক্রম গ্রেড অনুযায়ী দেখে নিতে পারেন –

১। প্রশাসন ক্যাডার সচিবালয়ে পদক্রম

  • সহকারি সচীব – ৯ম গ্রেড।
  • সিনিয়র সহকারী সচিব – ৬ষ্ঠ গ্রেড।
  • উপসচিব – ৫ম গ্রেড।
  • যুগ্ন সচিব – ৩য় গ্রেড।
  • অতিরিক্ত সচিব – ২য় গ্রেড।
  • সচিব – ১ম গ্রেড।
  • সিনিয়র সচিব – সুপার গ্রেড।
  • মন্ত্রিপরিষদ সচিব – স্পেশাল গ্রেড।

২। প্রশাসন ক্যাডার মাঠ পর্যায়ের পদক্রম

  • সহকারী কমিশনার – ৯ম গ্রেড।
  • অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক – ৬ষ্ঠ গ্রেড।
  • জেলা প্রশাসক – ৫ম গ্রেড।
  • অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার – ৪র্থ গ্রেড।
  • বিভাগীয় কমিশনার – ৩য় গ্রেড।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার উপায়

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার উপায়

উপরে আলোচনা যদি আপনি ইতিমধ্যে পড়ে থাকেন তাহলে বুঝেই গেছেন একজন প্রশাসন ক্যাডার কত সম্মানিত একজন ব্যাক্তি। আপনি যদি প্রশাসন ক্যাডার হতে চান তাহলে প্রথমে যাচাই করে নিন আপনার জিপিএ সর্বোচ্চ আছে কি না, এরপরে দেখুন আপনি শারিরীক ভাবে যোগ্য কি না।

যদি আপনি এ সকল ক্ষেত্রে যোগ্য হোন তবে আপনাকে প্রচুর পরিমানে পড়াশোনা করতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি আপনাকে মানুষিক ভাবেও যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। এর জন্য নিচের কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন –

১। সিলেবাস দেখুন : যেহেতু ইতিমধ্যে আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনি প্রশাসন ক্যাডার হতে চান। তাহলে আপনাকে পড়াশোনা শুরু করার পূর্বেই সিলেবাস সম্পর্কে জানতে হবে। যদি কোনো বিষয় সিলেবাসে না থাকে আর আপনি সেটা পড়েন তাহলে সময় নষ্ট ছাড়া লাভজনক কিছুই হবে না।

২ – প্রিলিমিনারি পরীক্ষা : প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমেই প্রিলিমিনারি এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সাধারণত গনিত, সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। তাই এই ০৩ টি বিষয়ে কোনো একটায় দূর্বলতা থাকলে সেটা পড়াশোনার মাধ্যমে দূর্বলতা দূর করে নিন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা মোট ২০০ নম্বরের হয়।

৩ – লিখিত পরীক্ষা : প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করার পরে মোট ১১০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে লিখিত পরীক্ষায়। লিখিত পরিক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশ্ন হয়। লিখিত পরীক্ষার জন্য ও আপনি সিলেবাস অনুযায়ী প্রস্তুতি নিবেন।

৪ – ভাইবা পরীক্ষা : লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পরে শেষ ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হলো ভাইবা পরীক্ষা। এ ক্ষেত্রে আপনার মানুষিক দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন সহ আপনার স্নাতক পর্যায়ের বিষয় থেকে বেশিরভাগ প্রশ্ন করতে পারে।

৫ – মেডিকেল টেস্ট : ভাইবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে আপনাকে একটি মেডিকেল টেস্ট দিতে হতে পারে।

৬ – প্রশিক্ষণ : উপরের সব গুলো বিষয়ে আপনি উত্তীর্ণ হয়ে গেলে আপনি একজন প্রশাসন ক্যাডার হবেন। যোগদানের পরেই বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন কেন্দ্র থেকে ৬ মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষন সম্পন্ন করতে হবে। পর্যায় ক্রমে চাকরিরত অবস্থায় আইন ও প্রশাসন উপর ৫ মাসের প্রশিক্ষন নিতে হবে। এ ছাড়াও সাভারে সার্ভে ট্রেনিং ও ক্যান্টনমেন্ট মিলিটারি ওরিয়েন্টশন এ ৫২ দিনের প্রশিক্ষন নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি – নামাজ না পড়ার শাস্তি

লেখকের শেষকথা

বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারের কম্পিটিশন থাকে সবচেয়ে বেশি। আপনি যদি পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভালো হয়ে থাকেন তবে এই পদে আপনি ক্যাডার হতে পারেন। যদি প্রশাসন ক্যাডার সম্পর্কে আরো প্রশ্ন থাকে তবে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন, ধন্যবাদ সকলকে।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

বায়ার কীটনাশকের সর্বশেষ মূল্য তালিকা ২০২৫ – সাশ্রয়ী দামে সেরা পণ্য

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এখানে প্রচুর শস্য ফলে। এছাড়াও নানান জাতের সবজি, ফুল ফল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *