ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে কীটনাশক ১০০% কার্যকরী

ভুট্টা বাংলাদেশের গুরত্বপূর্ণ খাদ্যশস্যের মধ্যে অন্যতম। তাই আজকের আর্টিকেলটি লেখা হচ্ছে “ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে কীটনাশক ১০০% কার্যকরী” এই শিরোনামে। ভুট্টা একটি অর্থকরী ফসল। সারা বছরজুড়েই দেশের সর্বত্রই এই ফসলটি ব্যাপক হারে চাষ করা যায়।

ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে কীটনাশক

আমরা মূলত ভুট্টার দানা খেয়ে থাকি। এই দানা সরাসরি বা প্রক্রিয়াজাত করে খাই। বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত কর্নফ্লাওয়ার এই ভুট্টা থেকেই তৈরি। এছাড়া কর্ণফ্লেক্স, পপকর্ণ, ঝলসানো ভুট্টা ইত্যাদি মজার মজার খাবার বানানো হয় ভুট্টা দিয়ে।

বর্তমানে মানুষ ছাড়াও পশুখাদ্য্য হিসেবেও ভুট্টা ব্যাপক জনপ্রিয়। শুধু এর দানাই নয়, গাছও খুবই দরকারি। গরু, ছাগল, মহিষ সহ বিভিন্ন গবাদিপশুর জন্য এই ভুট্টা গাছ অনেক উপকারি। তাই বর্তমানে ভুট্টা চাষে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু ভুট্টা চাষে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। এর অন্যতম কারণ হলো পোকার আক্রমণ। মাজরা পোকা ভুট্টার শত্রু। তাই এই পোকা দমনে কী কী কীটনাশক কার্যকরী তা নিয়েই জানাবো।

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

ভুট্টার মাজরা পোকা কি?

ভুট্টার মাজরা পোকা অত্যন্ত ক্ষতিকর পোকা। এই পোকা ভুট্টা ক্ষেতে হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।তাই মাজরা পোকার ব্যাপারে কৃষকদের সতর্ক থাকতে হয়। ভুট্টা গাছে মাজরা পোকা ছাড়াও আরও পোকা আক্রমণ করে। আবার এক এক জাতের পোকা এক এক রকম ক্ষতি করে।

Chilo Partellus হলো ভুট্টা গাছের মাজরা পোকার বৈজ্ঞানিক নাম। এই পোকাটি Crambidae পরিবারের ও Lepidoptera বর্গের অন্তর্ভুক্ত। একটি পূর্ণবয়স্ক মাজরা পোকা ৪ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর গায়ের রং হালকা গোলাপি রঙের ও পিঠে কালো দাগ আছে। এরা পাতার নিচে মধ্যে শিরা বরাবর ডিম পাড়ে এবং ডিমগুলোকে মোমের আবরণ দিয়ে ঢেকে ফেলে। আর শূককীট বা লার্ভা ২০-২৫ মিমি লম্বা হয়।

মাজরা পোকা ডিম পাড়ার পর ২-৫ দিন লাগে ফুটতে। ডিম ফুটে শূককীট বের হয়ে বড় হতে সময় নেয় ৪-৫ সপ্তাহ। এরপর ৭-১০ দিনের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক পোকায় পরিণত হয়। এই পোকা সাধারণত ভুট্টা পাতার উল্টো দিকে মাঝখানের শিরা বরাবর সাদা রঙের ডিম পাড়ে। এরা ডিমগুলো বিশেষ কায়দায় মোমের আবরণে ঢেকে ফেলে। পরে ডিম ফুটে শূককীট বের হয়। তারপর এরা কান্ডে প্রবেশ করে এবং কান্ডের ভিতরের টিস্যু খেতে থাকে।

মাজরা পোকা দ্বারা ভুট্টার গাছের ক্ষতির প্রকৃতি

মাজরা পোকা রবি এবং খরিফ উভয় মৌসুমের ভুট্টাতেই আক্রমণ করে থাকে। কান্ডের গায়ে ছিদ্র কিংবা মল দেখে খুব সহজেই গাছে পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। যদি মাজরা পোকা কান্ডের আগার দিকে আক্রমণ করে তাহলে টাসেল উৎপন্ন হয়না। যার কারনে ফলন মারাত্মক ভাবে হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়া এরা ভুট্টার মোচায় ও আক্রমণ করে এবং মোচা খেতে থাকে। মাজরা পোকা ভুট্টার কান্ডে ছিদ্র করে ভিতরের টিস্যুগুলোকে খেয়ে ফেলে, যার ফলে কান্ড ঢলে পড়ে যায়। মাজরা পাতা তে আক্রমণ করে পাতা খেয়ে ফেলে। তবে ভুট্টার সবচেয়ে বেশী পরিমাণে ক্ষতি করে কান্ডের আগার দিকে আক্রমণ এর মাধ্যমে।

মাজরা পোকা কীভাবে ভুট্টার ক্ষতি করে

ভুট্টা গাছে মাজরা পোকা নানা ভাবে ক্ষতি করে। বিশেষ করে এর লার্ভা বা শূককীটগুলো ভুট্টা গাছের কান্ডে প্রবেশ করে। তারপর কান্ডের টিস্যু খেয়ে ফেলে। এতে গাছের পাতা শুকিয়ে যায় ও কান্ড ভেঙে যায়। টান দিলে মরা ডিগ উঠে আসে।

পূর্ণবয়স্ক মাজরা পোকা বড় গাছে আক্রমণ করে কান্ড ছিদ্র করে খেয়ে ফেলে। ফলে অল্প বাতাসে বড় গাছ ভেঙে যায়। ভুট্টা গাছের মাঝখান থেকে নতুন পাতার বের হলে তা ছিদ্র করে। এতে পরাগায়ন ব্যাহত হয়।

সর্বশেষ মাজরা পোকা ভুট্টার মোচা বের হলে মোচায় আক্রমণ করে। এতে ভুট্টার দানা নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি এই পোকা ভুট্টা তোলার পরও দানা, গাছ ও মাটিতে থেকে যায়। আর পরবর্তী মৌসুমে পুনরায় আক্রমণ করে।

আরো পড়ুন: ধানের মাজরা পোকা দমনের কীটনাশক

ভুট্টার মাজরা পোকা দমনের উপায়

মাজরা পোকা ভুট্টার অন্যতম বড় শত্রু। এগুলো দমন করা না গেলে ভুট্টার ফলন ব্যাপক কমে যাবে। তাই ভুট্টার মাজরা পোকা দমনের উপায় সবাইকে জানতে ও প্রয়োগ করতে হবে। দুইভাবে ভুট্টার মাজরা পোকা দমন করা যায়। ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে কীটনাশক ১০০% কার্যকরী পাওয়া গেলেও প্রাকৃতিক উপায়েও এই পোকা দমন করা যায়।

প্রাকৃতিকভাবে ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে উপায়

ভুট্টা গাছে মাজরা পোকা হলে এর দমনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এই পোকা দমনের উপায় জানব।

১। ভুট্টা চাষ করার সময় প্রতিরোধ হিসেবে গভীর ভাবে ভুট্টার জমি চাষ দিতে হবে। তাহলে ভুট্টার জমিতে যে পোকামাকড় গুলো আগে থেকেই থাকে সেগুলো ভুট্টার জমিতে গভীর ভাবে চাষ করার কারণে মাটির নিচে চলে যাবে। আর সেগুলো পোকা সেখানেই দমন হয়ে যাবে।

২। প্রাকৃতিক ভাবে ভুট্টা গাছের মাজরা পোকা দমনের প্রথম পদক্ষেপ হলো প্রতিরোধী জাত লাগানো।এই জাত লাগালে প্রাকৃতিকভাবেই মাজরা পোকা কম হবে। আর মৌসুমের শুরুতেই ফসল লাগাতে হবে। কারণ তখন পোকার আক্রমণ কম হয়।

৩। জমিতে বীজ বপনের কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন আগে জমি চাষ দিয়ে রেখে দিন এবং সেখানে পাখি বসার জায়গা করে দিন। তাহলে পাখি সেই পোকা গুলোকে খেয়ে ফেলবে এবং চাষাবাদের কারণে পোকার উপদ্রব কম হবে। এছাড়া শেষ চাষের সময় জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করুন।

৪। ফসল বোনার আগে জমির সমস্ত আগাছা ভালোভাবে তুলে জমির সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। এতে করে জমিতে লাগানো পূর্বের ফসল থেকে কোনও পোকার আক্রমণ হয় না। আর জমির আর্দ্রতা সঠিক রাখতে হবে।

৫। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির সেচ দিতে হবে এবং পানি দেয়ার সময়য় ভালোমানের দানাদার মাজরা পোকা দমনের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

৬। নিয়মিত ভাবে ভুট্টার জমিতে গিয়ে মাজরা পোকার ডিমের গাদা গুলোকে নষ্ট করতে হবে। এই ভাবে মাজরা পোকার সংখ্যা এবং ক্ষতি কমানো যায়।

৭। আক্রান্ত ভুট্টা গাছ থেকে লার্ভা ও ডিম সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।

৮। আক্রান্ত গাছগুলোকে উঠিয়ে ফেলতে হবে।

৯। লেডি বার্ড বিটল, মাকড়শা মাজরা পোকার প্রাকৃতিক শত্রু। এদেরকে জমিতে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

১০। ভুট্টা তোলার পর মাজরা পোকা আক্রান্ত অবশিষ্ট গাছ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কারণ লার্ভা এই গাছের মধ্যে থেকে যায়।

১১। আলোর ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা নিধনের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা এই পোকা আলো দেখলে সেখানে যায়। ফলে অন্য পোকামাকড় মাজরাকে খেয়ে ফেলে বা কৃষক নিজেও মেরে ফেলতে পারে। আর ফেরোমন ফাঁদ দিয়েও মাজরা পোকা দমন করা যায়।

আরো পড়ুন: ইনতেফা কীটনাশক তালিকা

কৃত্রিমভাবে ভুট্টার মাজরা পোকা দমনের উপায়

কৃত্রিমভাবে ভুট্টা গাছের মাজরা পোকা দমনের উপায় হলো কীটনাশক স্প্রে করা। বাজারে নানা ধরনের কীটনাশক রয়েছে। বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহের আগে পর্যন্ত এই কীটনাশক স্প্রে করা যায়।

ভুট্টা গাছে পোকার আক্রমণের পরিমাণ কতটা ও ফসলের জমির পরিমাণ কতটুকু সেসব অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। তবে বাজারে এখন জৈব ও রাসায়নিক ২ ধরণের কীটনাশক পাওয়া যায়। ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে এই ২ ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করা যায়। জৈব কীটনাশক পরিবেশবান্ধব। আর রাসায়নিক কীটনাশক দ্রুত কার্যকরী।

ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে এই পিডিএফ পরতে পারেন।

ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে কীটনাশক

বাজারে ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে কীটনাশক অনেক আছে। তার মধ্যে বহুল ব্যবহৃত কিছু কীটনাশকের কথা উল্লেখ করা হলো। ভুট্টার গাছের মাজরা পোকা দমন করার জন্য ২ থেকে প্রকার কীটনাশক একত্রে মিশে ব্যবহার করতে হবে এতে করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বিকাল বেলা স্প্রে করার চেষ্টা করবেন কেননা এই পোকা গুলো রোদের সময় বের হয় না। ভুট্টার মাজরা পোকা দমনের কীটনাশক গুলো হলো:

  • রিলোড (১৮ এস সি)
  • এসিমিক্স (৫৫ ই সি)
  • ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি
  • ক্যারাটে ২.৫ ইসি
  • দামার ৬০ ডব্লিউডিজি
  • মর্টার ৪৮ ইসি (ক্লোরোপাইরিফস)
  • কাটাপ্পা ৪৭ ডব্লিউ ডি জি
  • বেল্ট এক্সপার্ট
  • ডেসিস ২.৫ ইসি
  • রিপকর্ড ১০ ইসি
  • মারশাল ২০ ইসি
  • ফিপ্রোনিল ৫০ এসসি
  • রিজেন্ট ৫০ এসসি
  • ডারসবান ২০ ইসি
  • পাইরিফস ২০ ইসি
  • ক্লাসিক ২০ ইসি
নিম্নে ভুট্টার মাজরা পোকা দমনের কীটনাশক সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

১. বীজ বপনের সময় প্রতিহেক্টরে ২০ কেজি কার্বোফুরান প্রয়োগ করতে হয়। কার্বোফুরান একটি দানাদার কীটনাশক। এটি প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ পোকা লাগার আগে কার্বোফুরান ব্যবহার করলে পোকা লাগবেনা এবং পোকা লাগার পর ব্যবহার করলে পোকা মারা যাবে। এটি দানাদার হওয়ায় এটি ইউরিয়া সারের সাথে মিশিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া যায় এবং এতে বাড়তি শ্রমিক লাগে না।

২. ক্লোরপাইরিফস (ডারসবান ২০ ইসি বা পাইরিফস ২০ ইসি বা ক্লাসিক ২০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতিলিটার পানিতে ৫ মিলি অথবা নাইট্রো ৫৫ ইসি প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি অথবা বীজবপনের সময়ে হেক্টর প্রতি ২০ কেজি করে কার্বোফুরান (ব্রিফার ৫জি, ফুরাডান ৫জি বা অন্য নামের) কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

৩. ভুট্টা গাছের উপর থেকে হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫জি, ব্রিফার ৫জি বা অন্য নামের) এমনভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন কীটনাশকের দানাগুলো পাতার ভেতরে আটকে যায়।

৪. রিলোড (১৮ এস সি): ৫ মি.লি. নিয়ে ১০ লিটার পানিতে মিশাতে হবে। এই পরিমাণ ৫ শতক জমির জন্য। এই মিশ্রণ স্প্রে করে প্রয়োগ করতে হবে। আর প্রতি একরে মাত্রা ১০০ মিলি।

৫. এসিমিক্স (৫৫ ই সি): ১৫-২০ মি.লি. নিয়ে ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি একরে মাত্রা ২০০ মিলি। চারা অথবা বাড়ন্ত অবস্থায় জমিতে পোকা দেখা গেলে এটি প্রয়োগ করতে হবে। আর ১০ দিন পরপর ২-৩ বার ফসলে স্প্রে করতে হবে। বিকাল বেলা স্প্রে করার চেষ্টা করুন।

৬. ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি – ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে এই কীটনাশক অনেক কার্যকর। এটি প্রতি একর জমিতে ৩০ গ্রাম করে ব্যবহার করতে হবে। ধান গাছের ক্ষেত্রে চারা লাগানোর ১৫ দিন পর ৩০ গ্রাম ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি সামান্য পানিতে গুলিয়ে নিয়ে পরিমাণ মত ইউরিয়া সারের সঙ্গে মিশিয়ে সমস্ত জমিতে সমান ভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।

ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি কীটনাশক এর কার্যকারীতা ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তাই শীষ আসার পরে মাজরা পোকা যাতে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্যে চারা লাগানোর ৪০ দিন পর ভিরতাকো একই নিয়মে ২য় বার প্রয়োগ করতে হবে। ভিরতাকো শেষ প্রয়োগ এবং ফসল তোলার মাঝে ২১ দিন ব্যবধান রাখা উচিত। এই কীটনাশক ধান এবং ভুট্টাতে একই ভাবে কাজ করে।

৭. ক্যারাটে ২.৫ ইসি: বহুমুখী গুণসম্পন্ন স্পর্শক, পাকস্থলী ও প্রবহমান ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক। পোকার গায়ে লাগার সাথে সাথেই তাৎক্ষণিকভাবে পোকা মারা যায়। ক্যারাটে স্প্রে করার পর বা পোকা এর সংস্পর্শে আসা মাত্রই তাৎক্ষণিকভাবে পোকার শরীরে প্রবেশ করে বিধায় আক্রান্ত পোকা অতি দ্রুত খাদ্য গ্রহণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পোকা মারা যায়। অনুমোদিত পোকার ডিম, কিড়া ও পূর্ণবয়স্ক পোকা / মথ সফলভাবে দমন করে।

গাছের বয়স ২৫-৩০ দিন হলে ১০ লিটার পানিতে ১০ এমএল ক্যারাটে মিশিয়ে সারির উপর দিয়ে গাছের গোড়া বরাবর ভালভাবে মাটি ভিজিয়ে দিন। স্প্রে শেষে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিন।

৮. দামার ৬০ ডব্লিউডিজি: দামার ৬০ ডব্লিউডিজি বিভিন্ন ফসলের বিভিন্ন ধরনের মাজরা পোকা দমনে অত্যন্ত কার্যকর। যেমনঃ ধান, গম, আখ ও ভুট্টার মাজরা পোকা।

দামার ৬০ ডব্লিউডিজি স্পর্শক, পাকস্থলী ও গাছের ভেতর দ্রুত প্রবেশ করার ক্ষমতাসম্পন্ন প্রবহমান কীটনাশক। এর প্রবহমান গুণের কারণে গাছের শিকড়, পাতা ও কান্ড দ্বারা শোষিত হয়ে খুব দ্রুত জাইলেমের মাধ্যমে সমস্ত গাছে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গাছে পোকা আক্রমণ করলে বা খেলে অল্প সময়ের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের বিষক্রিয়ায় সেগুলো মারা যায়।

দামার ৬০ ডব্লিউডিজি হেক্টরে ২৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে। ধানের চারা লাগানোর ১৫-২০ দিনের মধ্যে সারের সাথে মিশিয়ে অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। আবার চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে প্রতি লিটার পানিতে ০-৫ গ্রাম মিশিয়ে সমস্ত গাছ ভালোভাবে ভিজিঁয়ে স্প্রে করে দিতে হবে। একই পদ্ধতিতে ভুট্টার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। দামার ৬০ ডব্লিউডিজি স্প্রে করার ৭-১৪ দিনের মধ্যে গবাদি পশু ও পাখি ক্ষেতে প্রবেশ করতে দিবেন না এবং ফসল তুলবেন না বা খাবেন না।

৯. ভুট্টা গাছ বড় হলে প্রতিহেক্টরে ২০ কেজি কার্বোফুরান উপর থেকে প্রয়োগ করতে হয়।খেয়াল রাখতে হয় যেন দানাদার কীটনাশকগুলো পাতার ভেতর আটকে থাকে।

১০. মর্টার ৪৮ ইসি (ক্লোরোপাইরিফস): ফসলের ছিদ্রকারী পোকা দমনে কৃষকের পছন্দের শীর্ষে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার এর মর্টার ৪৮ ইসি (ক্লোরোপাইরিফস)। ১ লিটার পানিতে ৭ মি.লি. গুলিয়ে ভুট্টা ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে। প্রতি একরে ১.৪ লিটার।

১১. কাটাপ্পা ৪৭ ডব্লিউ ডি জি: ১ লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করুন।

১২. বিরাট (২৩ ইসি): ১ লিটার পানিতে ২.৬ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করুন।

১৩. আরও ভালো ফলাফল পেতে সানটাপ প্লাস / ওয়ান স্টপ/এইম গোল যে কোন একটির সাথে ক্লোরোপাইরিফস + সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের (৫৫ ইসি) মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।

১৪. বেল্ট এক্সপার্ট: ১ একরে ১০০ মি.লি. স্প্রে করতে হয়।

১৫. ডেসিস ২.৫ ইসি: প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি করে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা প্রোক্লেম প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম করে ব্যবহার করতে পারেন। এইযে ২টি কীটনাশক সম্পর্কে বললাম এগুলা একসাথে মিশ্রন করে বা ককটেল হিসেবে বানিয়ে আপনি ভুট্টার জমিতে স্প্রে করবেন।

১৬. এসিমিক্স ৫৫ ইসি অথবা রিপকর্ড ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি হারে ব্যবহার করবেন ভুট্টার জমিতে। এর সাথে আপনারা প্লাস হিসেবে সিয়েনা ৬ ডব্লিউ জি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে একসাথে ব্যবহার করলে তাহলে মাজরা পোকা ভুট্টার জমিতে কখনোই থাকবে না।

১৭. মারশাল ২০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি করে ব্যবহার করতে পারেন।

১৮. অত্যধিক মাজরা পোকার আক্রমণে ম্যালাথিয়ন (ফাইফানন ৫৭ ইসি, সাইফানন ৫৭ ইসি, ম্যালাটন ৫৭ ইসি, ম্যালাটাফ ৫৭ ইসি, সুমাডি ৫৭ ইসি বা অন্য নামের) প্রতিলিটার পানিতে ১ মিলি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

১৯. অত্যধিক পরিমাণে ভুট্টার মাজরা পোকা আক্রমণে ডায়াজিনন (সেবিয়ন ৬০ ইসি, হেজিনন ৬০ ইসি, ডায়াজল ৬০ ইসি, ডায়াজন ৬০ ইসি, ডায়াজিনন ৬০ ইসি বা অন্য নামের) অথবা কার্বোসালফান (মার্শাল ২০ ইসি, সানসালফান ২০ ইসি, জেনারেল ২০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

উপরোক্ত কীটনাশক গুলো ছাড়াও আপনারা এসাটাফ ৭৫ এসপি ব্যবহার করতে পারেন অথবা ট্রেসার ৪৫ এসসি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে আরও কিছু কীটনাশক আছে যেমন সিমবুশ ২৫ ইসি, সাপার ৫ ইসি, ডেসিস ২.৫ ইসি, রিজেন্ট ৫০ এসসি, ফাইফানন ৫৭ ইসি ইত্যাদি।

সতর্কতা

আসলে কীটনাশক মানে বিষাক্ত জিনিস। এটি যেমন পোকা ধ্বংস করে তেমনি মানুষ ও পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। তাই রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের আগে প্যাকেটের গায়ে লেখা ব্যবহার বিধি পড়তে হবে।

যিনি এই কীটনাশক স্প্রে করবেন তার পরিধানে থাকবে হ্যন্ড গ্লাভস, মুখে মাস্ক, চোখে চশমা, ফুল শার্ট ও প্যান্ট। যেন কোনও ভাবে কীটনাশক শরীরের ভেতরে প্রবেশ না করে।

কীটনাশক স্প্রে করার পর ব্যবহারকারী পরিধেয় পোশাক ছেড়ে হাত, মুখ, পা সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধোবেন। সম্ভব হলে গোসল করে নিবেন। আর কুলি করে খাবার গ্রহণ করবেন। আর কীটনাশক স্প্রে করার সময় যেন পাশে খাবার খাওয়া না হয়। অথবা রান্না করাও না হয়।

আরো পড়ুন: কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য তালিকা

শেষ কথা

আজকের টপিক ছিলো ভুট্টার মাজরা পোকা দমনে ১০০% কার্যকরী কীটনাশক। এছাড়াও ভুট্টা গাছের গুরুত্ব, মাজরা পোকা কি, এই পোকা কেমন ক্ষতি করে, দমনের উপায়, কীটনাশকের নাম ইত্যাদি বিষয়ক তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আশা করি ভুট্টা চাষীরা উপকৃত হবেন। আর ভুট্টার ফলনও বাড়বে। লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

বায়ার কীটনাশকের সর্বশেষ মূল্য তালিকা ২০২৫ – সাশ্রয়ী দামে সেরা পণ্য

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এখানে প্রচুর শস্য ফলে। এছাড়াও নানান জাতের সবজি, ফুল ফল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *