কিডনি ড্যামেজের লক্ষণগুলি জেনে নিন | কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি জানতে চান? শরীরের অঙ্গ সংক্রান্ত শারীরিক জটিলতা গুলোকে নীরব ঘাতক বলা হয়। শরীরের তেমনই একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কিডনি। কিডনি আমাদের শরীরে দূষিত তরল বের করে ছাঁকনির কাজ করে, শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

যেকোনো বয়সের ব্যক্তির মধ্যেই কিডনির সমস্যা হতে পারে, কিডনি রোগের কোন নির্দিষ্ট বয়স নাই। সেই কিডনিতে ত্রুটিপূর্ণ কিছু ঘটলে শরীরে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। তাই কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ দেখলে বা কিডনিতে কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ, কিডনি ব্যথার লক্ষণ, কিডনিতে পাথরের লক্ষণ, কিডনিতে ইনফেকশনের লক্ষণগুলো এবং কিডনি সংক্রান্ত অন্যান্য সকল বিষয় ও তথ্য। তো চলুন প্রথমেই জেনে নেই কিডনি ড্যামেজের লক্ষণগুলি কি কি?

(toc) #title=(সুচিপত্র)

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

আমাদের শরীরের কিডনি ভালো আছে কিনা তা দেখতে হলে ক্রেয়েটিনিন এর মাত্রা দেখতে হবে। শরীরে ক্রিয়েটিনিনের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। এই নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম বা বেশি হয়ে গেলেই কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিস এবং হাই ব্লাড প্রেসার রোগীদের ক্ষেত্রে কিডনি ড্যামেজের আশঙ্কা থাকে বেশি।

শরীরে পেশির শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার শেষে তৈরি হয় ক্রিয়েটিনিন। দেহের সুস্থ কিডনি ক্রিয়েটিনিন শরীর থেকে বের করে দিতে পারে। তবে কিডনিতে সমস্যা হলে তা বের করতে পারে না, ফলে শরীরে বাড়তে থাকে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা।

মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা 0.59 to 1.04 mg/dl এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা 0.74 to 1.35 mg/dl এইমাত্রার থেকে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে শরীরে সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং কিডনি ড্যামেজ লক্ষণের আশঙ্কা থাকে।

তাই প্রতিটি মানুষের উচিত এই সময় সতর্ক থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। দেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন না যে, কিডনি ড্যামেজ হলে শরীরে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়, সেই লক্ষণগুলো অনুভব করলেই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হবেন। কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ হচ্ছে,

  • সারাক্ষণ শরীরে ক্লান্তি ভাব
  • শরীর দুর্বল লাগা
  • নি:শ্বাসের সমস্যা
  • যেকোনো কিছু খুব সহজেই ভুলে যাওয়া
  • পা অথবা পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া
  • শরীরে অতিরিক্ত চুলকানি
  • ফেনাযুক্ত অথবা প্রস্রাবের রং বদলে যাওয়া
  • রাতে ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া
  • পেশীতে ক্র্যাম্প ধরা
  • খাবারের মধ্যে কোন কিছুর স্বাদ পাওয়া যায় না।

শরীর এরকম লক্ষণ দেখা দিলেই সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। শরীরের যেকোনো ছোটখাটো সমস্যাকে অবহেলা করা উচিত নয়, ছোট ছোট সমস্যা থেকেই এক সময় বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। সঠিক সময়ে সুচিকিৎসার প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরী।

আরো পড়ুনঃ কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় | কিডনি ব্যথা কোথায় হয়

কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ

কিডনির সমস্যা বা এই রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোন উপসর্গ হয় না, তবে কিছু কিছু উপসর্গ শরীরে দেখা দেয়। যার ফলে আমাদেরকে সতর্ক থাকা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিডনি সংক্রমণের রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগই নারীরা, পুরুষরাও রয়েছেন তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা একটু বেশি। কিডনি ইনফেকশন সংক্রান্ত কিছু তথ্য বা লক্ষণ হচ্ছেঃ

  • পায়ের গোড়ালি বা পায়ের পাতা হঠাৎ করে ফুলে যেতে আরম্ভ করলে, এখান থেকে কিডনিতে ইনফেকশন হতে পারে।
  • অসময়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে দেখলে বুঝবেন যে কিডনিতে ইনফেকশন হতে পারে।
  • পিঠের পেশীতে বা হাত-পা এগুলোতে ঘন ঘন খিঁচুনি হলে কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ আছে।
  • বারবার প্রস্রাবের বেগ আসলে এবং রাতের বেলা বেশি আসলে, টেস্ট করানো উচিত, এতে কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ রয়েছে।
  • মুখ অথবা চোখের নিচ, চোখের চারপাশ ফোলে যায়, এতেও রয়েছে কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ।

সঠিক সময়ে সুচিকিৎসার ফলে কিডনি রোগও ভালো হওয়ার সম্ভাবনার আশঙ্কা থাকে।

আরো পড়ুনঃ কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা

কিডনি ব্যথার লক্ষণ

শরীরে কোনরকম ব্যথা, বেদনা ছাড়াও কিডনি খারাপ হতে পারে। কিডনি সমস্যার উপসর্গগুলো চটজলদি ধরা দেয় না, আস্তে আস্তে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার পরে অনেক দেরিতে দেখা দেয়। তাই যাদের পরিবারে কিডনি রোগী রয়েছেন বা আগে কেউ ছিলেন তাদের উচিত সচেতন থাকা। কিডনিজনিত ব্যাথার লক্ষণ, মূলত মেরুদন্ড থেকে একটু দূরে বাম বা ডান পাশে হয়। বিশেষ করে পিছনের পাঁজরের নিচের অংশে ব্যথা করে।

এই ব্যাথা নড়াচড়া করে যার ফলে কোমরের ডানে বামেও যেতে পারে। অল্প অল্প করে ব্যাথা বাড়ে এবং শোয়া, বসা, খাওয়া কোনো কিছুই ভালো লাগেনা। তাছাড়া কিডনির সমস্যায় এই ব্যথাটাই মূল উপসর্গ নয়, অন্যান্যও কিছু উপসর্গ শরীরে দেখা দেয়।

  • কিডনি সংক্রমণ হলে ব্যথার সঙ্গে জ্বরও থাকবে
  • প্রস্রাব ঘোলাটে হয়, প্রস্রাবে দূরগন্ধ বা একটু একটু রক্ত ও থাকতে পারে
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন পায়ে পানি আসে, বমি বমি ভাব হয়, খাবারের অরুচি থাকে
  • রক্তশূন্যতা থাকতে পারে এবং প্রস্রাব অল্প অল্প বা খুব বেশিও হতে পারে
  • শরীর খুব ক্লান্ত লাগে

শরীরে এরকম লক্ষণের ফলে অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

কিডনি পাথরের লক্ষণ

কিডনির ভিতরে মিনারেল জমে স্ফটিকের মত পদার্থ তৈরি করে, মূলত এটাকেই আমরা কিডনিতে পাথর বলে জানি। শরীরে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের ডিপোজিশন হলে কিডনিতে পাথর এই রোগের আবির্ভাব হয়। কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে।

সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না হলে ধীরে ধীরে পাথর বড় আকার বা বিস্তার লাভ করে, যার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং এক সময় একেবারেই অকেজ হয়ে পড়ে। কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা তার কিছু লক্ষণ হচ্ছে :

কিডনির অবস্থানে কোমরের পিছনের দিকে ব্যথা অনুভব করা। তলপেটে বা পেটের নিচেও ব্যথা হতে পারে, যেহেতু কিডনি জনিত ব্যাথা নড়াচাড়া করে শরীরের বিভিন্ন অংশে।

  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া অথবা একটু প্রস্রাব হয়ে আর হয় না, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা
  • লাল রঙের প্রস্রাব, প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া
  • মাঝে মাঝে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট ছোট পাথর আসে
  • শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে
  • ব্যথার সাথে সাথে বমি বমি ভাব অথবা বমিও হয়
  • প্রস্রাবের দুর্গন্ধ থাকে

তবে পেটের নিচে বা কোমরের পেছনে ব্যাথা হলেই যে তা কিডনিজনিত ব্যথা তা কিন্তু সঠিক নয়। তবে যেকোনো কারণেই ব্যাথা হোক না কেন আপনার উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কি ও কেন হয়

কিডনি রোগ কি ভালো হয়?

আমাদের চারপাশে যেহেতু কিডনি রোগের সংখ্যা অনেকাংশ। কিডনির সমস্যার শুরু থেকেই যদি সচেতনভাবে জীবনযাপন করেন তবে এই রোগ জটিলতার পর্যায়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের কিডনি রোগ নিয়েও আজীবন সুস্থভাবে জীবন কাটানো যায়।

তার জন্য হতে হবে খাবার দাবার বা অন্যান্য বিষয়ের উপর খুবই সচেতন। খাবারের জন্য বানিয়ে নিতে পারেন রেগুলার একটা পরিমিত সঠিক খাবারের চার্ট। পরিমাণ মতো শাকসবজি, ফলমূল, পানিয় এবং নিয়মিত শরীর চর্চা।

শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো না হলেও অন্যান্য ব্যায়াম না করে, প্রতিদিন কিছু সময় নিয়ে হাঁটা উচিত, যার ফলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রতিদিন পরীক্ষা করেন রক্তচাপ ও রক্তের সুগারের মাত্রা এবং অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখবেন প্রতিনিয়ত। যতটা সম্ভব ব্যথার ওষুধ কম সেবন করুন। মদ, ধূমপান বা নেশা জাতীয় কিছু পরিহার করুন।

তাছাড়া ৪০ বছর বয়সের পর, স্বাভাবিকভাবেই কিডনির কর্মক্ষমতা একটু একটু কমতে থাকে, এতে ভয় পাবার কিছু নেই খুব বেশি ব্যথা না হলে ব্যথার ওষুধ না খাওয়াই ভালো। এজন্য এই সময় একটু বেশি সচেতন থাকবেন এবং নিয়মমাফিক খাওয়া দাওয়া বা চলাফেরা করা উচিত।

আরো পড়ুনঃ কিডনি ফেইলিওর এর লক্ষণ

কিডনি ড্যামেজের কারণ

আমরা প্রতিদিনের কাজকর্মের মধ্যে এমন অনেক কিছুই করে থাকি যা আমাদের অজান্তেই কিডনির ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। সেরকমই কিছু কিডনি ড্যামেজের কারণ হচ্ছে :-

  • দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা
  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বা তরি-তরকারিতে আলাদা করে কাচা লবণ খাওয়া
  • যেকোনো কারণেই বারবার ব্যথার ওষুধ সেবন করা
  • যেকোনো সময় তৃষ্ণা পেলেই ক্যাফেইন গ্রহণ করা
  • অ্যালকোহলে আসক্ত
  • অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া
  • প্রতিদিন রাত জেগে থাকা
  • শরীরের সামান্য জ্বর-সর্দিকে অবহেলা করা
  • ধূমপানে আসক্ত

সাধারণত এই কারণগুলিই কিডনি ড্যামেজের কারন, তারপরও অনেক সময় কারণগুলোর কিছু লক্ষণ না দেখা দিলেও কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়। আমাদের উচিত শরীরের কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ কেই অবহেলা না করা। কিডনির সমস্যা অল্প থাকতে চিকিৎসা না করালে দেরিতে গিয়ে তা অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ নিয়ে সর্বশেষ

কিডনি যাতে ড্যামেজ না হয় বা কিডনিতে যাতে পাথর না হয়, আমাদের উচিত সেরকম ব্যবস্থায় থাকা অত্যাবশ্যক এবং কিডনিজনিত কোন সমস্যায় হাতুড়ে ডাক্তার বা কবিরাজ না দেখিয়ে ভালো চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন।

আমাদের আজকের আর্টিকেলে কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, কিডনি সংক্রান্ত বিষয়ের এই পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং কিডনিজনিত কিছু বা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা সর্বদাই উত্তর দিতে প্রস্তুত। সময় থাকতে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

বিভিন্ন সংক্রমণজনিত রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায় ডক্সিক্যাপ ১০০ এর ব্যবহার ও কার্যকারিতা

Doxicap 100 হলো ডক্সিসাইক্লিনের একটি বাণিজ্যিক নাম, যা Tetracycline শ্রেণীর একটি শক্তিশালী ব্রড-স্পেকট্রাম এন্টিবায়োটিক মেডিসিন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *