কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব আমরা আমাদের আজকের আলোচনা পর্বে। কেননা দেনমোহর একটি পরিশোধযোগ্য বিষয়। আর এটা বিয়ের পরবর্তী সময় হোক অথবা তালাক পরবর্তী সময়, অবশ্যই সে বিবাহিত নারীকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

অনেকেই রয়েছেন যারা কিছুদিন যাবত সংসার করেন আবার অনেকেই রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন যাবত সংসার করার পরবর্তীতে তালাক দেওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করেন। আর ঠিক তখনই আসে দেনমোহর পরিশোধের বিষয়টি। এজন্য আমরা কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম সেই সাথে দেনমোহর কখন পরিশোধ করতে হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

ইসলামী বিধান অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী এবং স্বামী-স্ত্রীর পরিবার মিলে দেনমোহরের টাকা এমনটাই ধার্য করা উচিত যেটা সঙ্গে সঙ্গে নগদ আদায় করা সম্ভব। এটা মূলত স্ত্রীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে আবার কখনো কখনো পরিবারের ওপরেও নির্ভর করে। তবে একজন স্ত্রী যদি চান তার স্বামীর কাছ থেকে অল্প দেনমোহর নিয়ে তাকে ঋণ মুক্ত করবেন তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য।

তবে হ্যাঁ, যদি কেউ বেশি দেনমোহর নির্ধারণ করে ফেলে এবং তার পরিমাণটা অনেক বেশি হয় যেটা সেই মুহূর্তে দেওয়া একদমই সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে পাত্রকে দেনমোহর পরিষদের জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হয়।

কেননা পাত্রের আর্থিক সমস্যার কারণে সে তৎক্ষণাৎ দেনমোহর পরিষদের ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করতেই পারেন। আরে এটা মূলত পরবর্তীতে শোধ করার কথা উল্লেখ রেখে বিবাহ কার্য সম্পন্ন করা হয়।

তবে হ্যাঁ, আরেকটা কথা হচ্ছে অনেকেই এটা মনে করেন দেনমোহরানা পরবর্তীতে পরিষদ না করলেও কোন সমস্যা হয় না মানে এটা ঋণ মুক্ত হয়ে যায়। কেননা সে স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করছে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তাভাবনার কারণে।

কিন্তু ইসলামী বিধান অনুযায়ী দেনমোহরের টাকা স্ত্রীর অবশ্যই প্রাপ্য। আর একজন স্বামী স্ত্রীর যে ভরণপোষণের দায়িত্ব নিচ্ছে সেটা ওই নারীর হক অর্থাৎ পাওনা।

তাই ভুলেও এমনটা ভাববেন না যে আপনার স্ত্রী কখনো দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে বলছেন না বলে আপনি ঋণ মুক্ত হয়ে গিয়েছেন বা আপনাকে দেনমোহরের টাকা আর পরিশোধ করতে হবে না!

তালাকের পর কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

তালাকের পর কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম হচ্ছে কোর্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা অথবা সামাজিকভাবে গ্রাম প্রধান উপজেলা প্রধান ইতাদের সকলের সমন্বয়ে যদি ডিভোর্স হয়ে থাকে তাহলে সেই মাধ্যমেই পরিশোধ করা। মূলত যখন ডিভোর্স হয়ে যায় একজন নারী এবং পুরুষের অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে, ঠিক সেই সময় দেন মোহরানা পরিশোধের বিষয়টি উঠে আসে।

যদি আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স হয়ে থাকে তাহলে সেখানে নির্দিষ্ট কিছু সময় উল্লেখ করা হয় এবং ওই সময়ের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে। অনেকেই রয়েছেন যারা সামর্থ্যবান তারা সঙ্গে সঙ্গে প্রাক্তন স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেন আবার অনেকেই রয়েছেন যারা আদালতের কাছে সময় চেয়ে নেন। এমনকি দেন মোহরের টাকার পরিমান যদি অনেক বেশি হয়ে থাকে তাহলে আদালত নিজেদের পক্ষ থেকেই কিছু সময় নির্ধারণ করে দিয়ে দেন।

এই সময় স্বামী কিস্তির মাধ্যমেও সেই দেনমোহর পরিশোধ করতে পারেন। কেননা এটা ওই স্ত্রীর প্রাপ্য আর সে পেয়ে গেলেই হয়ে গেল। পরবর্তীতে সে কিস্তি শোধ করতে হবে স্বামীকে এর জন্য কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না সেই নারীর। আর যদি পারিবারিকভাবে নির্ভরশ হয়ে থাকে তাহলে এটা পারিবারিকভাবেই সমাধান হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে সচরাচর কিস্তির মত এক কথায় নির্দিষ্ট সময় পরপর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হয়। তবে কিস্তির মাধ্যমে হোক অথবা নগদ যে কোন মাধ্যমেই সেই স্ত্রীকে তার দেনমোহরের টাকা ফেরত দেওয়া বাধ্যতামূলক। এটা যেমন ইসলামিক বিধান অনুযায়ী নির্ধারণযোগ্য ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের আইনেও প্রযোজ্য।

এর জন্য রয়েছে শাস্তির ব্যবস্থা। আর আপনি যদি দেনমোহর মামলার শাস্তি বা দেনমোহর পরিশোধ না করলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে এই সম্পর্কিত আরো কিছু আর্টিকেল পড়ে ফেলতে পারেন। কেননা ইতোমধ্যে তালাকের নিয়মাবলী এবং তালাক সম্পর্কিত বেশ কিছু পোস্ট আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি।

দেনমোহর মামলার রায়

দেনমোহর যে কোন মূল্যে পরিশোধ করতে হবে। দেনমোহর মামলা করলে যেমন শাস্তি পেতে হবে ঠিক একইভাবে শাস্তি পাওয়ার পাশাপাশি সেই নির্ধারিত পরিমাণ দেনমোহর স্ত্রীকে শোধ করতেই হবে এটাই নিয়ম। অনেকেই মনে করেন তালাক হয়ে যাওয়ার পর দুজন দুজনের থেকে দূরে থাকবে এবং টাকা নিয়ে কোন কিছু জল ঘোলা হবে না। আবার কেউ কেউ চিন্তা করেন ডিভোর্সটা হয়ে যাক তারপর দেনমোহরের টাকা দিলে দিবেন না দিলে না দিবেন।

কিন্তু এই সুযোগটি একদমই নেই এক্ষেত্রে। কেননা এখানে শুধুমাত্র স্বামী অথবা স্ত্রীর চাওয়া-পাওয়া নির্ভর করে না তালাক দেওয়ার পরবর্তী সময়ে। স্ত্রী যদি কখনো চেয়েও থাকে যে দেনমোহরের টাকা না দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা করবে না কিন্তু কিছু পরিবারের চাপে পড়ে অনেক মেয়েরাই এ কাজটি করে থাকে। আর যেহেতু এটা ওই মেয়ের হক তাই সে সচরাচর ছাড় দেয় না। আর এটা আইনি দিক থেকেও বাধ্যতামূলক বলে বিবেচ্য।

ঠিক এই কারণে আদালতে উপস্থিত হলে ম্যাজিস্ট্রেট দেনমোহরের টাকা পরিষদের বিষয়টি সুন্দরভাবে বিবেচনা করেন। আর সবদিক চিন্তা ভাবনা করে যদি টাকার এমাউন্ট অনেক বেশি হয় তাহলে নির্দিষ্ট সময় পরপর কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধ করার অনুমতি প্রদান করেন।

আর আপনি তো জানেন যে কিস্তি মূলত একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর টাকা পরিশোধের একটা নিয়ম ব্যবস্থা। তবে হ্যাঁ, কিস্তির ক্ষেত্রে কিন্তু অনেকটা সময় নির্ধারণযোগ্য হয় কিন্তু দেনমোহরের টাকা পরিশোধের জন্য যে কিস্তির নিয়ম প্রযোজ্য সেটার সময় ব্যবধান খুব একটা বেশি থাকে না।

তবে আর্থিক অসচ্ছলতা এবং ব্যক্তিগত সমস্যার কথা যদি স্বামী বিস্তারিত খুলে বলেন এবং কোন একটা সময় নির্দিষ্ট ভাবে আদালতের কাছে পেশ করেন তাহলে তারা চাইলেও সময়টা কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে স্বামীর মতামত খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায় না। কেননা এটা ইসলামিক বিধানে এবং বাংলাদেশের আইন উভয়তেই দেনমোহরানা পরিশোধ বাধ্যতামূলক এমনটাই বলা হয়েছে।

কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধ

কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের বিষয়ে আমরা গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেকটি বিষয় ইতিমধ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এ পর্যায়ে এই সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে আসুন দেনমোহর পরিশোধ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর জেনে নেওয়া যাক।

১. কাবিনের টাকা পরিশোধ না করলে কি হয়?

উত্তর: কাবিনের টাকা পরিশোধ না করলে শাস্তি পেতে হয়। এছাড়াও ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারীকে সম্মান করা হচ্ছে কাবিন। তাই দুনিয়াতে যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীর কাবিনের টাকা পরিশোধ না করে তাহলে আখিরাত জীবনেও এই ঋণের হিসাব দিতে হবে। এক কথায় কাবিনের টাকা পরিশোধ না করলে কৈফিয়ত দিতে হয় এবং এর জন্য গ্রহণ করতে হয় শাস্তি।

২. স্ত্রীকে তালাক দিলে দেনমোহর পাবে কি?

উত্তর: স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দিতে চায় অথবা স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় তবুও ওই স্ত্রী দেনমোহর পাবে। কেননা দেনমোহরের সাথে তালাকের কোনই সম্পর্ক নেই। দেনমোহর একটি শর্ত যেটা স্বামীকে অবশ্যই পালন করতে হবে সেটা হোক তালাক এর পূর্বে দাম্পত্য জীবনে অথবা হোক তালাক পরবর্তী সময়ে।

৩. সর্বনিম্ন কত টাকা কাবিন করা যায়?

উত্তর: সর্বনিম্ন ২০০ টাকা কাবিন করা যায়। এর কমে কাবিন গ্রহণযোগ্য নয়।

৪. দেনমোহর কখন আদায় করতে হয়?

উত্তর: দেনমোহরের দুইটি অংশ থাকে। “মোহরে মুয়াজ্জাল” বা বাকীতে প্রদেয়। আমাদের দেশে মোহরের অর্থ বাকী রেখেই সাধারনত বিয়ে হয়ে থাকে। আর সেই বাকীই এক সময় ফাঁকিতে পরিনত হয়। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেনমোহরের টাকা নগদে বিয়ের সাথে সাথে বা প্রথন মিলনের রাতের আগেই পরিশোধ করা উত্তম।

৫. ইসলামে দেনমোহর পরিষদ না করার শাস্তি কি?

উত্তর: স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা ছাড়া যদি কেউ মারা যায়, স্ত্রীর কাছে মোহরের টাকা দেনাদার হিসাবে কিয়ামতের ময়দানে দাড়াতে হবে ৷ ফুকাহে কেরামান বলেন, কোন মানুষ যদি মারা যায় তার পরিত্যাক্ত সম্পদ থেকে স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে ৷ এটা পাওনাদারের পাওনার মত।

তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম সম্পর্কিত আলোচনার ইতি টানছি এখানেই। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

বায়ার কীটনাশকের সর্বশেষ মূল্য তালিকা ২০২৫ – সাশ্রয়ী দামে সেরা পণ্য

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এখানে প্রচুর শস্য ফলে। এছাড়াও নানান জাতের সবজি, ফুল ফল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *