কেক বানানোর রেসিপি

কেক বানানোর রেসিপি – কেক বানানোর পদ্ধতি – চুলায় তৈরি ভ্যানিলা ফ্লেভার কেক বানানোর রেসিপি — সাধারণত আমরা কেক বলতেই বুঝতাম জন্মদিনের কেক। কিন্তু অবশ্য তা নয় বিভিন্ন উপলক্ষে, সফলতা, নতুন কিছুর আগমন, কিছু পাওয়া সব কিছুতেই আমরা এখন কেক দিয়ে সেলিব্রেশন করি। 

বিবাহ বার্ষিকী, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, বধূবরণ, বর বরণ, নতুন কোনো দোকান বা ব্র্যান্ডের প্রমোশন অথবা উদ্বোধন, ফ্যামিলী গেট টু গেদার, বন্ধুদের সাথে গেট টু গেদার, বাসায় নবজাতকের বরণ, অতিথি আপ্যায়ন, বর্ষবরণ উদযাপন ইত্যাদি আরো অনেক উপলক্ষে কেকের আয়োজন করা হয় এবং কোনো উপলক্ষ ছাড়াও নিজের মন চাইলেই কেক খাওয়া হয়।

উপলক্ষ যেমন অনেক, তেমন কেকের ফ্লেভার অনেক ধরনের রয়েছে। একেক জনের পছন্দ এক এক রকম, তাই ভিন্ন ফ্লেভারের কেক থেকে যে যার পছন্দ মতো বেছে নিতে কোনো অসুবিধা হয়না। ভ্যানিলা ফ্লেভার, স্ট্রবেরি ফ্লেভার, চকলেট ফ্লেভার, ম্যাংগো ফ্লেভার, লেমন ফ্লেভার, বাটার স্কচ্ ফ্লেভার, অরেঞ্জ ফ্লেভার, ব্ল্যাক ফরেস্ট, হোয়াইট ফরেস্ট, রেড ভেলভেট, চিজ কেক, সুইস রোল, মার্বেল কেক, রেইনবো কেক আরও বিভিন্ন ধরনের কেক বর্তমানে কিনতে পাওয়া যায় বা ঘরে বানিয়ে নেয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ পরোটা খাওয়ার উপকারিতা | গমের রুটি খাওয়ার উপকারিতা

আজকে আপনাদের সাথে ঘরে চুলায় কেক বানানোর রেসিপি শেয়ার করবো। ইনশাআল্লাহ আশা করি আপনারা এতে উপকৃত হবেন এবং নিজের পছন্দের ফ্লেভার অনুযায়ী কেক ঘরেই বানিয়ে খেতে পারবেন। যেহেতু সবগুলো কেকের রেসিপি একসাথে দেওয়া সম্ভব না তাই আজকে ভ্যানিলা ফ্লেভার এর কেকের রেসিপি শেয়ার করবো। কোনো কিছু রান্নার ক্ষেত্রে রেসিপি অনুযায়ী করলে তা যেমন সহজ ও বোধগম্য হয়। সঠিক মাপ ও পরিমাণের কারণে অপচয় ও রোধ করা সম্ভব এবং সময়মত খাবার তৈরি করা যায়।

কেক বানানোর সরঞ্জাম

কেক তৈরির ক্ষেত্রে কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন যা ঘরেই বেশিরভাগ পাওয়া যায়। ইলেকট্রিক বিটার বা হ্যান্ড বিটার। মেজারমেন্ট কাপ, কেক তৈরির মোল্ড বা অ্যালমুনিয়ামের বাটি। চুলায় কেক বেক করার জন্য ঢাকনা সহ হাড়ি (যার ভিতরে কেক মোল্ড রাখা যাবে) ও পাতিল রাখার ছোট স্ট্যান্ড। কেক নাইফ বা ব্রেড নাইফ। ডিজাইন করার জন্য নজেল ও পাইপিং ব্যাগ।

কেক বানানোর উপকরণ

ডিম ২ টি, চিনি ১/২কাপ, হোয়াইট ভিনেগার ১/২ চা-চামচ, তেল ২ টে.চা, ময়দা ১/২ কাপ, বেকিং পাউডার ১/২ চা চামচ, বেকিং সোডা ১/৪ চা-চামচ, লবণ ১/৪ চা-চামচ, ভ্যানিলা এসেন্স ১/২ চা-চামচ, লিকুইড হুইপড ক্রীম ২/৩ কাপ।

প্রথমে একটি বাটিতে সব শুকনো উপকরণ গুলো একসাথে নিয়ে চেলে নিতে হবে। বাজারের খোলা ময়দা ও ব্যবহার করা যাবে। ময়দা, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা ও লবণ একসাথে নিয়ে ভালোমতো চেলে নিতে হবে। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে একপাশে রেখে দিতে হবে। এরপর অন্য একটি বাটিতে রুমের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা দুটি ডিম এর কুসুম আলগা করে ডিমের সাদা অংশ গুলো নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা | পেয়ারার গুনাগুন ও উপকারিতা

এতে হাফ কাপ চিনি (ঘরে ব্যবহার করা চিনি নিলেই হবে) ও হাফ চা চামচ হোয়াইট ভিনেগার নিতে হবে। তারপর প্রথম লো স্পিড এ ২ মিনিট এবং হাই স্পিড এ ৪ মিনিট বিট করে নিতে হবে। এভাবে ৬ থেকে ৭ মিনিট বিট করলেই হয়ে যাবে ডিমের ফোমটা যখন সাদা ও ক্রিমে মত হয়ে যাবে তখন বুঝা যাবে যে ডিমের ফোম টা রেডী হয়ে গিয়েছে। 

এখন ডিমের ফোম টাতে কুসুম, ১/২ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স ও ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে কিছুক্ষণ বিট করতে হবে। ঘরে রান্নার সয়াবিন তেল নিলেই হবে। এবার শুকনো উপকরণ গুলো আরেক বার চালুনি দিয়ে চেলে ডিমের সাদা ফোমের সাথে মিলাতে হবে। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আস্তে আস্তে আলতো ভাবে ময়দার মিশ্রণটি ডিমের ফোম এর সাথে মিলাতে হবে, তা না হলে ডিমের ফোমটি নষ্ট হয়ে যাবে ফলে কেক ফুলবে না। 

এরপর ৭”/৮” সাইজ এর কেক মোল্ড নিয়ে এতে কাগজ বিছিয়ে তেল ব্রাশ করে নিতে হবে। তেল ব্রাশ করে নেয়ার পর কেক এর ব্যাটার টি মোল্ডে ঢেলে দিতে হবে। ব্যাটার মোল্ডে ঢেলে দেওয়ার পর ২-৩ বার ট্যাপ করে নিতে হবে, যেন ভিতরে বাতাস থাকলে বের হয়ে যায়। কেক এর ব্যাটার তৈরি করার পর দেরি করা যাবে না সাথে সাথে কেকটি বেক করতে দিতে হবে। 

চুলায় একটি হাড়িতে হাফ ইঞ্চি পরিমাণ বালি দিয়ে তার উপর দুটো পাতিল রাখার স্ট্যান্ড দিয়ে ১০ মিনিটের জন্য হাইটে প্রিহিট করে নিতে হবে। কেকের ব্যাটার তৈরি করার সময় হাড়ি প্রিহিট করার জন্য চুলায় দিয়ে নিলে বেশি সুবিধা হবে। এবার কেক মোল্ডটি চুলায় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যেন ভিতরের হাওয়া বাইরে না বের হয়। চুলার আঁচ লো থেকে একটু বেশি এবং মিডিয়াম থেকে একটু কম রেখে ৪০ মিনিটের জন্য বেক করে নিতে হবে। 

৪০ মিনিটের মধ্যেই কেক টি হয়ে যাবে। ৪০ মিনিট পর ঢাকনা তুলে টুথপিক বা কেক টেস্টার এর মাধ্যমে চেক করে নিতে হবে কেকটি পুরোপুরি হয়েছে কিনা। টুথপিক বা টেস্টার যদি পরিষ্কার আসে তাহলে বুঝতে হবে কেকটি হয়ে গিয়েছে। আর যদি পরিষ্কার না হয় তাহলে আরো দুই-তিন মিনিট চুলায় রাখা যাবে। তবে বেক করার সময় কিছুতেই চুলার আঁচ লো করে রাখা যাবে না তাহলে কেক টি হতে অনেক সময় লাগবে। 

আরো পড়ুনঃ ডার্ক চকলেট খাওয়ার উপকারিতা | ডার্ক চকলেটের অপকারিতা

চুলা থেকে নামিয়ে কেকটি পুরোপুরি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কেক টি ঠান্ডা হবার পর ব্রেড নাইফ এর সাহায্যে তিন ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। ১/৩ কাপ পানির সাথে ৩ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে সুগার সিরাপ তৈরি করে নিতে হবে। কেক বোর্ড বা সমান কোন প্লেটে কেকের একটি ভাগ রেখে চামচের সাহায্যে সুগার সিরাপ দিতে হবে। 

যেন সম্পূর্ণ অংশ সুগার সিরাপ দিয়ে ভেজা থাকে কোন জায়গায় বাদ না পড়ে। সুগার সিরাপ দেওয়ার পর এতে ক্রিম এর লেয়ার দিতে হবে। এখন সচরাচর সব জায়গায় হুইপড ক্রিম কিনতে পাওয়া যায়। হুইপড ক্রিম এর সাথে পরিমাণমতো চিনি দিয়ে ভালোভাবে বিট করে ফোম করে নিলেই কেকের উপযোগী ক্রিম তৈরি হয়ে যাবে। 

এরপর কেক এর দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে এতে সুগার সিরাপ ও ক্রিম দিয়ে দিতে হবে। তারপর তৃতীয় ভাগ দিয়েও সুগার সিরাপ দিয়ে পুরো কেকটা ভালোভাবে ক্রিম দিয়ে কভার করে নিতে হবে। এরপর পাইপিং ব্যাগে ক্রিম ভরে নজেল এর সাহায্যে নিজের পছন্দমত ডিজাইন করে নিতে হবে। এই কেকটার ওজন এক পাউন্ডের থেকে কিছুটা বেশি হবে।

কেক বানানোর টিপস

কেক তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছু কমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, এই টিপস গুলো জেনে নিলে আশা করা যায় সেই সমস্যাগুলো আর হবেনা।

১। কেকের ফোম কখনোই ওভার বিট করা যাবে না। কেক এর ফোম নষ্ট হয়ে গেলে কেক স্পঞ্জ হবে না ও ফুলবে না ২। কেক বেক করার সময় চুলার আঁচ অবশ্যই থেকে একটু বেশি রাখতে হবে। আবার অতিরিক্ত বেশি রাখা যাবে না ৩। যে পাত্রে কেক টি বেক করা হবে তাতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন ভিতর হাওয়া না বের হয়। ঢাকনা তে কোন ছিদ্র থাকলে কাগজ দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ নরম তুলতুলে পরোটা বানানোর রেসিপি

৪। অবশ্যই সঠিক সাইজ এর মোল্ড ব্যবহার করে কেক বেক করতে হবে। একটি ডিম দিয়ে কেক তৈরি করতে হলে ৫ ইঞ্চি সাইজের মোল্ড ব্যবহার করতে হবে যদি ৭ বা ৮ ইঞ্চি সাইজের মোল্ডে দেয়া হয় তাহলে কেক ফুলবে না ব্যাটার চারো দিকে ছড়িয়ে গিয়ে কেক ফ্লাট হয়ে যাবে। তাই সঠিক মোল্ড ব্যবহার করতে হবে 

৫। আর যদি তিনটি ডিম দিয়ে কেক তৈরি করতে হয় তার জন্য ৬/৭ ইঞ্চি সাইজের মোল্ড নিলে চলবে না। এতে কেক ফুলে উপচে পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সঠিক সাইজ এর মোল্ড নির্বাচন করে তারপর কেক বেক করতে হবে।

৬। কেক চুলা থেকে নামানোর পর তাড়াহুড়া করা যাবে না। কেকটি সম্পূর্ণরূপে ঠান্ডা করে তারপর ডেকোরেশন করতে হবে। গরম অবস্থায় ডেকোরেশন করা যাবে না ৭। ডিম অনুযায়ী চিনি, ময়দা ও তেলের অনুপাত বাড়িয়ে বা কমিয়ে বিভিন্ন সাইজের কেক তৈরি করা যাবে ৮। একটি বড় সাইজের ডিমের জন্য ১/৪ কাপ চিনি, ১/৪ কাপ ময়দা, ২ টেবিল চামচ তেল ব্যবহার করতে হবে।

৯। তিনটি বড় সাইজের ডিমের জন্য ৩/৪ চিনি, ৩/৪ কাপ ময়দা, ৬ টেবিল চামচ তেল ব্যবহার করতে হবে ১০। চারটি বড় সাইজের ডিমের জন্য ১ কাপ চিনি, ১ কাপ ময়দা ও ১/৪ কাপ কাপ তেল ব্যবহার করতে হবে ১১। অবশ্যই বরফ ঠান্ডা অবস্থার হুইপড ক্রিম নিতে হবে কেকের ডেকোরেশন এর জন্য।

উপরিউক্ত নিয়মগুলো ফলো করে বানালে ইনশাল্লাহ আপনিও পারফেক্ট কেক তৈরি করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ রুটি খাওয়ার উপকারিতা | রাতে রুটি খাওয়ার উপকারিতা

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

হুন্ডি কি? জানুন হুন্ডি ব্যবসা হালাল নাকি হারাম?

অনেকে হুন্ডি ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু এ বিষয়ে একটু দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে থাকেন তা হলো হুন্ডি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *