গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত – একজন নারীর জীবনে গর্ভাবস্থার সময়টা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গর্ভাবস্থায় গর্ভের শিশুর পুষ্টি নির্ভর করে সম্পূর্ণ মায়ের উপর। কারণ একজন মা যা খাবে তার গর্ভের শিশু সে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করবে।

সুতরাং এই গর্ভাবস্থার সময়টুকুতে একজন মায়ের উচিত যথেষ্ট পরিমাণে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই গর্ভবতী আছেন, যারা প্রথমবারের মত মাতৃত্বের স্বাদ নিতে যাচ্ছেন।

তাই প্রথমবার গর্ভধারণ করার কারণে অনেকেই জানেন না গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কেমন খাবার খাওয়া উচিত। কিংবা গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত, গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে, গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত নয়। আমাদের মধ্যে এমন অনেক গুরুজনরা আছেন যারা বিশেষ কিছু ফল গর্ভাবস্থায় খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু আসলেই কি তাদের নিষেধ করা ফলগুলো খাওয়া গর্ভাবস্থায় ঠিক নয়? নাকি সেই ফলগুলোতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ।

তাই আজকের আর্টিকেলটি আমি এমন ভাবে সাজিয়েছি যা থেকে আপনারা ধারণা পাবেন একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত এবং গর্ভাবস্থায় তার জন্য কোন ফলটি ভালো এবং কোন ফল গুলো ভালো নয়। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত

ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। বিভিন্ন ফলে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ। একজন সুস্থ সবল মানুষেরও উচিত সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কোনো না কোনো ফল রাখা। আর যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য তো ফল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাবার।

ঠিক তেমনইভাবে গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য দৈনিক ফল খাওয়া অপরিহার্য। সব ফলেই রয়েছে দারুণ সব গুনাগুন। তবে গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত এমন প্রশ্ন আসলে অবশ্যই বলবো এই ফলগুলো একজন গর্ভবতী মায়ের খাওয়া উচিত। যেমনঃ

১) কলা: একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তত একটি হলেও কলা রাখা উচিত। কারণ কলাতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। কলা এমন একটি ফল যা গর্ভাবস্থায় দেহে ইলোকট্রোলাইটসের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে দেহের স্নায়ু ও মাংসপেশির কাজকর্ম বেশ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

তাছাড়া কলা খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর যেহেতু গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা কম থাকে, এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কলা খাওয়া উচিত। তাছাড়া কলা একটি সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য ফল। তাই গর্ভাবস্থায় অবশ্যই একজন মায়ের বেশি করে কলা খাওয়া উচিত।

২) কমলা: কমলায় আছে ফাইবার ও ফলিক অ্যাসিড। এটি মাতৃগর্ভের ভ্রূণের মস্তিষ্ক আর মেরুদণ্ডের সঠিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

৩) পেয়ারা: পেয়ারায় পাওয়া যায় প্রচুর ভিটামিন সি উপাদান। চিকিৎসা বিজ্ঞানিদের মতে চারটি আপেল অথবা চারটি কমলার পুষ্টিগুণের সমান হলো একটি পেয়ারা। আর গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে এটি গর্ভকালীন সময়ের কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪) আপেল: আপেলও অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা একজন গর্ভবতী মায়ের হিমোগ্লোবিনের যাবতীয় সংকট সামাল দিতে সক্ষম।

৫) কিউই: কেউই যদিও একটি বিদেশি ফল, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ফলিক এসিড ও ভিটামিন সি। কিউই ফল খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। যা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। সুতরাং একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই এই ফলগুলো খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত কিংবা গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে এমন প্রশ্ন একজন গর্ভবতী মায়ের মনে হরহামেশাই ঘুরপাক খায়। শাক সবজির মাছ মাংসের মত ফলেও রয়েছে ব্যাপক পরিমাণ পুষ্টিগুণ। সুতরাং গর্ভবতী মায়ের সুস্থতা এবং গর্ভের বাচ্চার সঠিক বিকাশের জন্য অবশ্যই একজন গর্ভবতী মাকে ফল খেতে হবে।

তবে আমাদের সমাজে কিছু বৃদ্ধ মহিলা আছে যাদের ঘরে কোন মেয়ে গর্ভবতী হলে তারা কিছু কিছু ফল খেতে নিষেধ করে দেয়। তাহলে গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে? গর্ভাবস্থায় আপনি অবশ্যই এই ফলগুলো খাবেন:

১) নাশপাতি: নাশপাতিকে বলা হয়ে থাকে আপেলের ঘনিষ্ঠ চাচাতো ভাই। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফোলিক অ্যাসিড। তাছাড়াও নাশপাতিতে আছে ভিটামিন সি-র পুষ্টিগুণ।

২) আতা: আতা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, যা গর্ভের বাচ্চার চোখ, চুল, ত্বক এবং শরীরের টিস্যু উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়।

৩) ডালিম: ডালিম খুবই জনপ্রিয় ও পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল। ডালিমে রয়েছে ফোলেট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, এবং ভিটামিন সি। সুতরাং গর্ভাবস্থায় ডালিম খাওয়া যাবে।

৪) অ্যাভোকাডো: গর্ভাবস্থায় অ্যাভোকাডো খাওয়া যাবে। অ্যাভোকাডোর মধ্যেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ।

৫) আম: আম খুব মজাদার একটি ফল। আমে পাবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি। যেটি গর্ভাবস্থায় হজমের সহায়তা করবে।

৬) চেরি: চেরিতে আছে ভিটামিন সি। চেরি ফলে থাকা গুণাগুণ সর্দি কাশির মতো সংক্রমণ প্রতিরোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

৭) তরমুজ: তরমুজে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, এবং ভিটামিন বি-৬। আরও আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম। অধিক গুণাগুণ থাকার কারণে একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই তরমুজ খাওয়া প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত না

গর্ভাবস্থায় অবশ্যই একজন গর্ভবতী মাকে কিছু ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর ফল খাওয়া ঠিক নয়। এতে মিস ক্যারেজ বা গর্ভপাত হতে পারে হতে পারে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় পেঁপে খাওয়া একদম ঠিক নয়।

কারন এই ফল হলো ল্যাটেক্সসমৃদ্ধ। যেটি জরায়ুর মধ্যে সংকোচন, রক্তপাত অথবা গর্ভপাত ঘটার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া যে ফল অনেক সময় ধরে হিমায়িত করে বা ফ্রিজে রাখা হয় সে ফলো একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার ঠিক নয়।

গর্ভাবস্থায় টক খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় টক জাতীয় ফল খাওয়া যাবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েরা বমি বমি ভাব দূর করতে তেঁতুল খেয়ে থাকেন, যা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবেনা। তার তাছাড়া আপনি চাইলে টক জাতীয় ফল যেমন কমলালেবু, বাতাবি লেবু, বরই ইত্যাদি ফলগুলো খেয়ে পারেন। আপনি চাইলে টক জাতীয় ফল আম ও খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত নিয়ে সর্বশেষ

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত? এই প্রশ্নটির উত্তর আশা করি এতক্ষণে পেয়ে গেছেন। সুতরাং আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই চেষ্টা করবেন আপনার হাতের নাগালে থাকা পুষ্টিকর ফল গুলো খাওয়ার। কারণ শাকসবজি মাছ-মাংসের পাশাপাশি অবশ্য একজন গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল খাওয়া উচিত। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় উচিত একটি বা দুইটি সিজনাল ফল রাখা। যে ফলগুলো সহজলভ্য এবং কম দামি সে ফলগুলো গর্ভবতী মায়েরা খেতে পারেন। এতে তার শরীর ও থাকবে সুস্থ এবং শিশু বিকাশে হবে সঠিক।

FAQ

১) গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না?

উত্তর: করোলা, কাঁচা পেঁপে, সজনে ডাটা খাওয়া ঠিক নয়।

২) গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না?

উত্তর: অতিরিক্ত চা কফি ও ধূমপান করা যাবে না।

৩) গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না?

উত্তর: হাঙ্গর মাছ, টাইটেল ফিশ, কিং ম্যাকেরেল ফিশ খাওয়া যাবে না।

৪) গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ?

উত্তর: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত দৌড়াদৌড়ি করা চলবে না, ভারী জিনিস বহন করা যাবে না,নিচু হয়ে ঝুঁকে কোন কাজ করা যাবে না। এতে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

হুন্ডি কি? জানুন হুন্ডি ব্যবসা হালাল নাকি হারাম?

অনেকে হুন্ডি ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু এ বিষয়ে একটু দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে থাকেন তা হলো হুন্ডি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *