ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস – ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস

আজকের এই আর্টিকেল থেকে চলুন জেনে নেই ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর ইতিহাস ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের কাহিনী এবং ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করার পিছনের মূল উদ্দেশ্য আসলে কি?

ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস

১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রতিবছর বিশ্বের সকল প্রেমিক প্রেমিকারা এ দিনটি খুবই উৎসাহের সঙ্গে পালন করে থাকে। এই দিনে প্রেমিক প্রেমিকারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে ফুল, চকলেট এবং বিভিন্ন গিফট দিয়ে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানায় এবং তাদের প্রেমকে প্রকাশ করে।

ভালোবাসা দিবসে কাপলরা একসঙ্গে সময় কাটায় এবং সারাজীবন একসাথে থাকার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি দিনে সকলের মতো আপনিও হয়তোবা আপনার মনের মানুষটির সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপন করার জন্য কোনো বিশেষ পরিকল্পনা করছেন।

কিন্তু হ্যাঁ আপনি কী জানেন এই ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর ইতিহাস কী? অথবা ভ্যালেন্টাইন্স ডে কেন পালন করা হয়? প্রত্যেক উৎসবের মতোই এই দিনের ইতিহাস আছে, যা আমাদের সকলের জানা দরকার। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে জেনে নেই ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস আসলে কি?

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

ভ্যালেন্টাইন ডে কি – ভ্যালেন্টাইন্স ডে মানে কি

ভ্যালেন্টাইন ডে হচ্ছে একটি বাৎসরিক উৎসব যা প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনে কাপলরা একে অপরকে ফুল, চকলেট এবং বিভিন্ন গিফট দিয়ে তাদের ভালোবাসা দিবস এর শুভেচ্ছা জানায় এবং একসঙ্গে সময় কাটাই অনেকেই আবার ক্যান্ডেল লাইট ডিনারও করে।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর ইতিহাস – ভ্যালেন্টাইন্স ডে কিভাবে আসলো

প্রিয় পাঠক আসলে “ভ্যালেন্টাইনস” কোনো দিনের নাম নয়, এটি রোমের ১ জন পাদরির নাম। “অরিয়া অফ জ্যাকবাস ডি ভোরাজিন” গ্রন্থ অনুযায়ী, ৩য় শতাব্দীতে রোম সম্রাট ক্লোডিয়াস- এর শাসনকালে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস সেখানকার বিখ্যাত পাদরি তথা চিকিৎসক ছিলেন।

রাজা ক্লোডিয়াস তাঁর রাজ্যকে শক্তিশালী করার জন্যে একটি বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেন যেসকল সৈনিকদের স্ত্রী এবং সন্তান আছে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে লড়তে চায়না। সেই কারণে শাসক ক্লোডিয়াস খুব্ধ হয়ে একটি নিয়ম বানিয়েছিলেন, যার ভিত্তিতে তিনি ভবিষ্যতে সমস্ত সৈনিকদের বিবাহ নিষিদ্ধ করছিলেন।

কিন্ত সকলেই এই নিয়মের বিরুদ্ধে ছিলো, কিন্তু কেউই শাসকের বিরুদ্ধে বলতে সাহস পায়নি। তবে হ্যাঁ পাদরি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের তীব্র বিরোধীতা করেছিলেন এবং তিনি গোপনে সৈনিকদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু শাসক ১ দিন এই খবর জেনে যায় এবং নিয়ম ভঙ্গ করার অপরাধে ভ্যালেন্টিনকে কারাগারে বন্দী করেন।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস যখন কারাগারে বন্দী হয়ে ছিলো, তাঁর অনুগামীরা গোলাপ এবং উপহার নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতো এবং খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করতো। তাছাড়াও বন্দি অবস্তায় তিনি অলৌকিক চিকিৎসা শক্তির দ্বারা ১ কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

ভ্যালেন্টাইনের এই অলৌকিক শক্তির কথা জানতে পেরে বহু মানুষ তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করে। কারাগারে ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি হতে দেখে রাজা খুব্ধ হয়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃ- ত্যু দণ্ডের আদেশ দেয়।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইনসকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে মৃ- ত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং মারা যাওয়ার আগে তিনি তার অনুসারীদের উদ্দেশ্য একটি চিঠি লিখেছিলেন, যাতে তিনি ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার অনুরোধ করেছিলেন। সেই চিঠির শেষে লেখা ছিলো “লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন”। তাই সেই দিন থেকে আজ অবধি ১৪ ফেব্রুয়ারী সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস এর স্মরণে ১৪ফ্রেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয়।

আরো পড়ুন: ১৪ ফেব্রুয়ারি নিয়ে ইসলাম কি বলে

ভ্যালেন্টাইন উইক লিস্ট – ভ্যালেন্টাইন্স ডে লিস্ট

ভ্যালেন্টাইনস ডে শুধুমাত্র ১ দিন না এটি পুরো সপ্তাহ জুড়ে পালন করা হয়। ভ্যালেন্টাইন ডে উৎসব ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এবং এটার প্রতিটি দিনকে একটি বিশেষ নাম দেয়া হয়েছে। ভ্যালেন্টাইন উইক লিস্ট নিম্নে দেওয়া হলোঃ

৭ ই ফেব্রুয়ারি রোজ ডে: এই বছরে ভ্যালেন্টাইন্স উইকের প্রথম দিন রোজ ডে ৭ ই ফেব্রুয়ারি। এই দিনে প্রেমিক প্রেমিকারা একজন আরেকজনে লাল গোলাপ ও বন্ধুরা একজন আরেকজনকে হলুদ রংয়ের গোলাপ দিয়ে রোজ ডে পালন করে। ৮ ই ফেব্রুয়ারি সোমবার প্রপোজ ডেঃ ভ্যালেন্টাইন উইকের ২য় দিনটি হচ্ছে প্রোপোজ ডে। এই দিনে ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের মনের কথাগুলো জানিয়ে প্রপোজ করার দিন।

৯ ই ফেব্রুয়ারি চকোলেট ডে: ভ্যালেন্টাইন্স উইকের ২য় দিন প্রোপোজ ডে পরে চলে আসে চকলেট ডে। এই দিন মনের মানুষটিকে চকলেট দিয়ে চকলেট ডে পালন করে থাকে। ১০ ই ফেব্রুয়ারি বুধবার টেডি ডেঃ চকলেট দিয়ে মিষ্টি মুখ করার পরের দিন এবার একে অপরকে গিফট দেয়ার পালা। এদিনে আপনি আপনার প্রিয় মানুষটিকে একটি মিষ্টি টেডি গিফট করতে পারেন।

১১ ই ফেব্রুয়ারি প্রমিস ডে: টেডি ডে এর পরের দিন হচ্ছে প্রমিস ডে। এদিনে প্রেমিক প্রেমিকা ও কাপলসরা সারাজীবন একসাথে থাকার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ১২ ই ফেব্রুয়ারি শুত্রুবার হাগ ডেঃ হাগ ডে ১২ ই ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন উইকের এই দিনে ভালোবাসার মানুষটিকে আলিঙ্গন করে উদযাপন করা হয়ে থাকে।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি কিস ডে: কিস ডে তে প্রেমিক প্রেমিকারা একে অপরকে চুম্বন করে ভালোবাসা প্রকাশ করে। ১৪ ই ফেব্রুয়ারি রবিবার ভ্যালেন্টাইন ডেঃ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন উইকের শেষ দিন। এই দিনে প্রেমিক প্রেমিকারা সারাদিন একসঙ্গে সময় কাটাই এবং মুভি দেখা সহ আরো বিভিন্ন কাজ এবং পার্কে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করে থাকে।

ভ্যালেন্টাইনস ডে কবে

প্রতিবছর ভ্যালেন্টাইন ডে ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখে পালন করা হয়।

১৪ ই ফেব্রুয়ারিতেই কেন ভালোবাসার দিবস পালন করা হয়?

একজন বিখ্যাত পাদরি তথা চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনসকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে মৃ- ত্যু দণ্ড দেয়া হয়েছিল এবং মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্য একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তিনি ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। সেই চিঠির শেষে লেখা ছিলো “লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন”। তাই সেই দিন থেকে আজ অবধি ১৪ ফেব্রুয়ারী সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস এর স্মরণে ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।

ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে – ভালবাসা দিবস ইসলাম কি বলে

উপরোক্ত আলোচনা করা ইতিহাস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, তথাকথিত ভালবাসা দিবস কখনোই এদেশীয় অর্থাৎ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ ছিলোনা। আর মুসলমানদের সংস্কৃতিতো নয়ই। বরং সেটা সম্পূর্ণরূপেই বিজাতীয়, বিধর্মীয় তথা, পশ্চিমা ইহুদী-নাছারাদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি, তর্জ-তরীক্বা যা অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য কাট্টা হারাম এবং শক্ত কবীরা গুনাহ। এছাড়াও তথাকথিত ভালোবাসা দিবসের নামে মূলত চলে বেপর্দা-বেহায়াপনার নির্লজ্জ উৎসব।

যাতে ইবলিস শয়তানের ওয়াসওয়াসা থাকে এবং নফস বা প্রবৃত্তির উদ্দামতা যুক্ত হয়। যা কুরআন শরীফ এবং সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক শক্ত কবীরাহ গুনাহ এবং পরকালে এসকল কাজের জন্যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে তথা জাহান্নামে যেতে হবে। এই প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নাশর তাদের সাথেই হবে।” অর্থাৎ যারা কথিত ভালোবাসা দিবস পালন করবে তাদের হাশর-নশর ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের সাথেই হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

মূলকথা হচ্ছে- যারা ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ পালন করবে তারা কুফরী করবে। কারণ ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস সম্পূর্ণরূপেই ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিক তথা কাফিরদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি বা তর্জ-তরীক্বা। যা মুসলমানদের মুসলমানিত্ব নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্রও বটে। তাই মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- ভ্যালেন্টাইন ডে’সহ সর্বপ্রকার কুফরী প্রথা থেকে বিরত থাকা।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

সুপারক্রিট সিমেন্ট দাম ২০২৫

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আশাকরি আপনারা সবাই অনেক অনেক ভালো আছেন। আজকের এই পোস্টটি থেকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *