মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

মুখে দুর্গন্ধের দূর্নাম আছে অনেকের। সারা পৃথিবীর প্রায় ২৫ শতাংশ নারী ও পুরুষ তাদের মুখের দুর্গন্ধের দূর্বার সমস্যায় ভুগে থাকেন। মুখের দুর্গন্ধের কারণ যেটাই হোক না কেন, এটি শুনতে মোটেও কোনো ভালো বিষয় নয় যে “ওমা! কি দুর্গন্ধে বাবা! মনে হয় দাঁত মাজে না”।

স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

জামা কাপড় ও ফ্যাশনে, সৌন্দর্যে ও সহাস্য এমনকি বচনে ও বাচনে আপনি যথেষ্টই স্মার্ট। যেকোনো পার্টিতেই সকলের নজর কাড়ার মতো চেহারা আছে আপনার। আপনাকে দেখে যেকেউ এক নিমিষেই মুগ্ধ হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু সেই আপনাকে লক্ষ্য করেই যখন আপনার আশেপাশের মানুষ উপরোক্ত কথাগুলি বলে, তখন আপনার নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে যে মাটির নিচে মিশে যেতে, কি ঠিক বলছি তাই না? তবে হ্যাঁ এখন আর তার প্রয়োজন নেই বরং আপনার করণীয় হ’ল মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণগুলো জানা ও স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় গ্রহণ করা। চলুন তাহলে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস সম্পর্কে সম্ভাব্য সব বিষয় জেনে নেইঃ

(toc) #title=(সুচিপত্র)

মুখের দুর্গন্ধ কি

মুখের দুর্গন্ধ কি

কথা বলার সময়ে নিঃশ্বাসের সাথে মুখ থেকে অপ্রীতিকর, অসহনীয় গন্ধ বাহির হয়ে আসাটাকেই মূলত মুখের দুর্গন্ধ বলা হয়। মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় এটাকে বলা হয় halitosis। আবার এটির আরেকটি নাম হচ্ছে fetor oris।

মুখের মধ্যে দুর্গন্ধ অকেশন নির্ভর অথবা অস্থায় হতে পারে। মানে বিশেষ কিছু সময়ে কারো কারো মধ্যে এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। আবার এই মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে ক্রনিক অথবা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। একজন মানুষ এর খাবারের ধরণ, ওরাল হাইজিনের সমস্যা, বিশেষ কোনো রোগে কিংবা অন্য যেকোন কারণেই এই মুখের দুর্গন্ধ সমস্যা হতে পারে। তো চলুন মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণগুলো জেনে নেই-

মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

  • কম পানি পান করা।
  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন।
  • দীর্ঘসময় ধরে না খেয়ে থাকা।
  • সঠিক পদ্ধতিতে দন্ত পরিচর্যা।
  • মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাসগত সমস্যা।
  • নিয়মিত নিয়মমতো মুখ ও দাঁতের পরিচর্যা না করা।
  • যেসব খাবার মুখের পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে তা বেশি খাওয়া।
  • শারীরিক কিছু রোগ এবং মুখ ও দন্ত রোগের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা
  • যেসব খাবার মুখের দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে, সেহরি বা ইফতারের সময় সেগুলো খাওয়া।
  • দীর্ঘ সময় কিছু না খাবারের কারণে ও জিহ্বা পরিষ্কার না করার কারণে জিহ্বার উপর সালফারের প্রলেপ পড়ে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
  • কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা থাকা যেমন- নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, পেটের পীড়া, লিভারের সমস্যা, টনসিলজনিত সমস্যা ইত্যাদি।
  • মুখের থুথু কমে যাওয়া- থুথু মুখের ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন বন্ধ করে কিন্তু রমজানে থুথুর পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়াগুলোর দ্রুত প্রজনন হয়ে থাকে, যা দুর্গন্ধের কারণ হয়।

মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার আরো বেশ কয়েকটি কারণ

অনেকজনের অনেক কারণেই মুখে দুর্গন্ধ সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে হচ্ছে ধুমপান করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, দাঁতের কোণে জমে থাকা খাবার, সময় মত দাঁত ব্রাশ না করা সহ ইত্যাদি যেমন কারণ আছে ঠিক তেমনই এর পেছনে আছে শারীরিক নানা ধরনের কারণও। তবে চলুন আজ মুখে দুর্গন্ধের সম্ভাব্য কারণগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-

খাবার থেকে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

মুখের দুর্গন্ধের প্রথম কারণের মধ্যে আছে খাবার। বিশেষ কিছু খাবার আছে যেগুলো মুখে দুর্গন্ধের কারণ যেমনঃ বেশি পরিমাণ মশলাযুক্ত খাবার, রসুন, পেঁয়াজ, কিছু চিজ, বিশেষ কিছু মাছ এবং অ্যাসিডিক বেভারেজ বা পানীয় পান করলে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।

তবে হ্যাঁ, বেশিরভাগ সময় এইসকল খাবার থেকে তৈরি মুখে দুর্গন্ধ বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়না। কিন্তু এই জাতীয় খাবারগুলো খেয়ে যদি দাঁত ব্রাশ না করেন, তাহলে এগুলো মুখের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী দুর্গন্ধ তৈরি করে থাকে। কারণ এসকল খাবার ব্যাকটেরিয়া ও ডেন্টাল প্লাক প্রমোট করতে পারে। এছাড়াও লো হাইড্রেট খাবারগুলিও দুর্গন্ধ তৈরি করতে থাকে যাকে Ketone Breath বলা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ testes siccati 3x এর কাজ কি | টেস্টিস 3X ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কফি পানে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

যদি আপনি একজন খুববেশি কফিপ্রেমী হন, বিশেষ করে যদি সকালবেলা এক কাপ কফি না খেয়ে আপনি দিন শুরু করতে পারেন না, তাহলে আজই আপনার মুখের দুর্গন্ধ কমানোর জন্য এই প্রিয় পানীয় খাবারটি বাদ দিন। কেননা কফি পান করার ফলে কারো কারো মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর যদি আপনার ক্ষেত্রেও ঠিক এই সমস্যা হয়, তাহলে চেষ্টা করুন প্রতিদিন অন্ততপক্ষে সকালে কফি না খেয়ে দিন শুরু করতে।

কফি পান করার কারণে আমাদের মুখের Saliva অথবা লালার উপরে দারুণ প্রভাব সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কফির মধ্যে থাকা উচ্চ মাত্রার ফ্লেভার আমাদের মুখের মধ্যে লালা উৎপাদনে হ্রাস বাড়িয়ে তোলে। আর মুখের মধ্যে কম লালা বা Shortage of Saliva মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ধুমপান সেবন মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

ধুমপান সেবন মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ধুমপান। নিয়মিত ধূমপান করার কারণে মুখগহবরে মাঝে ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। সেই সঙ্গে ধুমপান করার ফলে দাঁতের মাড়িকে নানান রকম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ধূমপান দাঁতের ছোপছোপে দাগের সৃষ্টি করে দেয় যা মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ।

ফলে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য আপনি আজই ধূমপান পরিহার করুন। তো এখন আপনি হয়তো বলবেন যে, ধূমপান পরিহার করা মোটেও কোনো সহজ কাজ নয়। কিন্তু হ্যাঁ আপনি কি জানেন যে ধূমপান পরিহার করার ১৩টি চ্যালেঞ্জিং উপায় আছে যার মধ্যে থেকে যে কোনটি অথবা একাধিক উপায় অবলম্বণ করে আপনি ধূমপান পরিহার করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় ১০০% কার্যকরী

তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ

আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা হয়তোবা ধূমপান করেন না ঠিকই, কিন্তু পান খেতে ভালোবাসেন। আর যারা অতিরিক্ত পান খাওয়াতে আসক্ত, তাদের মুখের মধ্যে দূর্গন্ধ তৈরি হয়ে থাকে। কেননা পানের সঙ্গে তারা সরাসরি তামাক অথবা জর্দা হিসাবে তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করে থাকেন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে তামাক থেকে সৃষ্টি করা জর্দা, সিগারেটের বা ধূমপানের থেকেও অনেক বেশি ক্ষতিকর। সিগারেটের মধ্যে যে তামাক ব্যবহার করে থাকে, সেই তামাক অনেক বার রিফাইন বা পরিশোধন করে থাকে। যার কারণে, জর্দার তুলনায় তামাকের ক্ষতির দিকটা অনেকটা কম। কিন্তু জর্দার মধ্যে সাধারণত সরাসরি তামাক পাতা ব্যবহার করে থাকে, যেটি ক্ষতির দিক থেকে সিগারেটের থেকেও অনেক বেশি।

মদপান মুখে দুর্গন্ধের মস্ত বড় কারণ

অ্যালকোহল বা মদ্যপানে যারা আসক্ত তাদের মুখের দুর্গন্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। যারা প্রায়ই বা নিয়মিত মদ পান করে থাকেন, তাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনরা জানেন যে, তাদের মুখ থেকে কেমন ধরনের দুর্গন্ধ বাহির হয়ে থাকে।

যে যতবেশি পরিমাণ মদ পান করবে, তার মুখ থেকে ততবেশি দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে হ্যাঁ এটাই স্বাভাবিক। মদ্যপানে বিশেষ করে বেশি পরিমাণে মদ পানে মুখের মধ্যে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণটি হচ্ছে এটি মুখের মধ্যে Saliva উৎপাদন হ্রাস করে ফেলে। আর আমরা পূর্বেই জেনেছি যে মুখের Saliva অর্থাৎ মুখের মধ্যে লালার পরিমাণ কম হওয়ার কারণে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুনঃ কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় | কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়

শুষ্ক মুখে দুর্গন্ধ হয়

মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

মুখের দুর্গন্ধের প্রাকৃতিক প্রতিরোধক হ’ল Saliva অর্থাৎ মুখের লালা। এখন যদি মুখ শুষ্ক হয়ে থাকে, তাহলে মুখের মধ্যে লালা আসবে কই থেকে? সুতরাং লালা অর্থাৎ সেলিভার হ্রাসের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হবে।

যেমন আপনি অবশ্যই জেনে রাখবেন যে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রমজান মাসে মুখ শুষ্ক হয়ে যায় যার ফলে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। হাদিসে আছে, রোজা রাখার ফলে রমজান মাসে সৃষ্ট এই দুর্গন্ধ আখিরাতে সবথেকে মিষ্টি ও সুগন্ধ হয়ে প্রকাশ পাবে।

আর রমজান মাসে এই রোজা কারীর এই সুগন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক বেশি প্রিয়। আর হ্যাঁ রমজান মাস বাদে অন্যান্য মাসে মুখ থেকে আসা গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে একদম পছন্দনীয় নয়। সুতরাং আপনি নিজেই বুঝতেই পারলেন যে, শুষ্ক সময়ে মুখের মধ্যে দুর্গন্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক।

রোজা রাখা ছাড়াও অনেকই আছেন যে তারা তাদের মুখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা মুখোমুখি হয়ে থাকেন। আর এটির ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হ’ল মেডিসিন, বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ডাক্তারের সাজেস্ট করা বিশেষ ধরনের কিছু ঔষধ।

বিখ্যাত ওরাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বোসমা বলেছেন যে, এমন অনেক ঔষধ আছে যেগুলো পার্চ হয়ে মুখের মধ্যে দুর্গন্ধ তৈরি করে। এমনকি যদি আপনি এই ধরণের একাধিক ঔষধ গুলো খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার মুখের অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে উঠতে পারে। মুখের এই ধরণের শুষ্কতা থেকে রক্ষা পেতে হলে অনেক বেশি করে পানি করার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। সেই সঙ্গে সুগার ফ্রি সুইংগাম অথবা চকলেট খাওয়ার পরামর্শ আছে।

আরো পড়ুনঃ কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো

উচ্চ মাত্রার চিনি মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

স্পাইসি খাবার থেকে যে মুখের মধ্যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়ে থাকে, সে সম্পর্কে পূর্বে বলেছি। এখন জেনে নিন যে, অতিরিক্ত পরিমাণে মশলাযুক্ত খাবার বাদেও উচ্চ মাত্রার চিনি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে মুখের মধ্যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।

আমাদের মুখের মধ্যে যে উপকারি ব্যাকটেরিয়াগুলি থাকে সেইগুলো খাবারের অংশ থেকে চিনি গ্রহন করে থাকে। কিন্তু যদি এই চিনি গ্রহণের মাত্রা বেশি হয়ে থাকে, তখন সেই বেশি চিনির ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে মুখের মধ্যে Halitosis নামে রোগের জন্ম দেয় যা থেকে মুখের মধ্যে অনেক বাজে গন্ধের সৃষ্টি হয়।

হাই প্রোটিন ও লো কার্বোহাইড্রেট খাবার মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার অনেক সময়ে হজম হতে বেশ ভালো সময় নেয়। আবার অনেক এর ক্ষেত্রেই উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার সহজেই হজম হতে চায়না। আর ঠিক তখনই এই জাতীয় খাবারগুলি সালফিউরাস গ্যাসের তৈরি করে। বিশেষ করে প্রোটিনযুক্ত খাবারের যে অংশগুলি সম্পূর্ণভাবে হজম হয় না সেইগুলো থেকে গ্যাসের তৈরি হয় যা মুখের গন্ধ সৃষ্টি করে।

অপরদিকে, কার্বোহাইড্রেড শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন গুলোকে পরিচালনা করে থাকে। এখন যদি আমাদের প্রতিদিনে খাবারে যদি যথেষ্ট পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট না থেকে থাকে, তাহলে এটি আমাদের শরীরের মেটাবোলিজম বা হজম প্রক্রিয়ার উপরে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুনঃ সেরেলাক এর উপকারিতা | সেরেলাক কোনটা ভালো 

হজমে সমস্যা হলে মুখে দুর্গন্ধ হয়

হজমে সমস্যা হলে মুখে দুর্গন্ধ হয়

এই বিষয়টি পূর্বে আলোচনা করেছি। তবে এটি শুধুমাত্র উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার অথবা নিম্ন কার্বো খাবারের বেলাতেই নয়। তাই আমাকে নতুন করে আলোচনা করা লাগছে। মূলত যেকোনো ধরণের খাবারই যদি তা সঠিক মতো করে হজম না হয়ে থাকে তাহলে সেটা গন্ধ তৈরি করবেই।

যদিওবা হজম শক্তি বৃদ্ধি করার কিছু প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল উপায় রয়েছে, তবুও যাদের হজমশক্তি খুব দূ্র্বল, তাদের মুখের মধ্যে গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। বিশেষ করে যারা প্রায়ই ডায়রিয়া অথবা কৌষ্ঠকাঠিন্যে রোগে ভুগে থাকেন তাহলে তাদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি অনেক বেশি দেখা যায়।

দাঁতে পাথর হলে মুখে দুর্গন্ধ হয়

মুখে দুর্গন্ধ হয় কেন

আমরা যখনি খাবার খেয়ে থাকি, তখন খাবারের কিছু কিছু অংশ স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের দাঁতের গোড়ার বিভিন্ন জায়গাতে আঁটকে থাকে। সাধারণত ব্রাশ করে খাবারের এই সকল অবশিষ্ট অংশ দাঁতের চিপায় থেকে বাহির হয়ে যায়। যার কারণে মুখ থাকে পরিস্কার।

কিন্তু যখনি আমরা সঠিক ভাবে ব্রাশ করি না অথবা সঠিক সময়ে দাঁত ব্রাশ বা পরিস্কার করিনা, তখনি খাবারের এসকল অংশ দাঁতের গোড়ায় জম জমতে একসময় পাথরের আকার ধারন করে পাথরে পরিণত হয় যাকে বলা হয় ডেন্টাল প্লাক।

দাঁতের মাড়িতে যদি পাথর হয়, তবে পাথরের সঙ্গে জিহ্বা এবং মাড়ির ঘর্ষণে মুখে প্রদাহ অর্থাৎ ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আর এখান থেকেই মূলত একটা সময় মাড়িতে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো আবার রক্ত ঝরে, আবার কখনো কখনো সেখানে রক্ত জমে যায় যেখান থেকে পরে পুঁজে সৃষ্টি হয় আর তা থেকে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুনঃ সোলাস ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম | সোলাস ট্যাবলেট খাবার নিয়ম

অপরিচ্ছন্ন জিহ্বা থেকে মুখে দুর্গন্ধ হয়

অপরিচ্ছন্ন জিহ্বা থেকে মুখে দুর্গন্ধ হয়

অপরিচ্ছন্ন ও অপরিস্কার জিহ্বার কারণে মুখের মধ্যে দুর্গন্ধের কারন হতে পারে। আমরা সবাই যেহেতু দৈনন্দিন খাবার খেয়ে থাকি, আর প্রতিদিনই আমাদের জিহ্বা সেই সকল খাবারের কোনো না কোনো অংশ পেয়ে থাকে, তাই সেই জায়গাতে ময়লা জমা হতে থাকে।

আপনি যদি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জিহ্বার দিকে তাকিয়ে দেখেন, তাহলে দেখতে পারবেন সেখানে ময়লা জমে আছে অনেক। মূলত এই ধরনের ময়লা থেকেও মুখের দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাজেই আপনি যখন ব্রাশ করবেন তখন জিহ্বাকে পরিস্কার করে নিবেন।

অথবা ব্রাশ করার সময় বাদেও যে কোনো সময়ে আপনি জিহ্বার ময়লা পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন। দীর্ঘদিন বা দীর্ঘসময়ে আপনি যদি জিহ্বা পরিস্কার ও পরিছন্ন না করেন, তাহলে জিহ্বায় এক রকমের ময়লার আস্তরণ জমতে থাকবে যা থেকে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হবে।

আরো পড়ুনঃ মাথা ভারী লাগার কারণ – মাথা ভারী হলে করণীয়

বিশেষ কিছু মেডিকেল কন্ডিশন

অনেক সময়ে মাড়িতে হওয়া নানা রোগ বা গাম ডিজেস মুখে দুর্গন্ধের তৈরি করে। অপরদিকে, এই মুখের দুর্গন্ধ অ্যালার্জি, ল্যাকটোস ইনটলারেন্স অথবা ডায়াবেটিস এর কারণও হতে পারে। এছাড়াও লিভারে মধ্যে থাকা সমস্যা কারণে এই সমস্যা হতে পারে।

তাছাড়াও, ব্রংকাইটিস ও কিডনি ডিজেস থাকলেও মানুষের মুখের মধ্যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। তো আপনি বুঝতেই পারলেন যে, উপরোক্ত রোগগুলির সাইড ইফেক্ট হিসাবে কখনো কখনো মুখে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে।

তাহলে এই ক্ষেত্রে তেমন একটা চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ, যে রোগটির কারণে আপনার মুখের দুর্গন্ধের তৈরি হয়, সেই রোগটি যখন ভালো হয়ে যাবে, ঠিক তখনি এমনিতেই সজীব নিঃশ্বাস চলে আসবে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

  • লবঙ্গ: এতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ, যা মুখের দুর্গন্ধ তৈরি করা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে ১ থেকে ২টা লবঙ্গ নিয়ে চুষতে থাকুন। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যেই গন্ধ একেবারে ভালো হয়ে গেছে।
  • পার্সলে পাতা: এই পাতায় আছে ক্লরোপিল নামক একটি উপাদান যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। কয়েকটি পার্সলে পাতা নিয়ে চিবিয়ে ফেলুন। ফল পাবেন সাথে সাথে।
  • পুদিনাপাতা: এই উপাদানকে প্রাকৃতিক মাউন্ট ফ্রেশনার ও বলা হয়। আপনার মুখে গন্ধ থাকলে ২-৩টি পুদিনাপাতা নিয়ে চিবিয়ে ফেলুন। নিয়মিত খেলে মুখের গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • মধু এবং দারুচিনি: মধু এবং দারুচিনি দুটি উপাদানের শক্তিশালী অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা মুখের ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হ্রাস করতে এবং মাড়িকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। দাঁত এবং মাড়িতে নিয়মিত ভাবে মধু এবং দারুচিনির পেস্ট লাগালে দাঁতের ক্ষয়, মাড়ি হতে রক্তপাত এবং এমনকি নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের সমস্যা কমাতে পারে। মধু এবং দারুচিনি এই দুটি উপাদানই একেবারে নিরাপদ এবং সহজেই রান্নাঘরে পেয়ে যাবেন।
  • লেবুর রস: যদি মুখের গন্ধের কারণে আপনার জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে, তবে নিয়মিত লেবুর রস খেতে ভুলবেন না। কেননা বেশ কিছু গবেষণায় জানা গেছে যে, লেবুর রসে থাকা অ্যাসিটিক কনটেন্ট, মুখ গহ্বরে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণু গুলোকে মেরে ফেলে।
  • দারচিনি: মুখের ভিতরে তৈরি হওয়া জীবাণু মেরে ফলতে দারচিনির কোনো বিকল্প নেই। তাই মুখ থেকে গন্ধ বেরলেই এক চামচ দারচিনির পাউডারের সঙ্গে পরিমাণ মতো জল মিশিয়ে গরম করে নিন। তারপর সেই জল ছেঁকে নিয়ে মুখ ধোন। দেখবেন গন্ধ চলে যাবে।
  • মেথি বীজ: এক চা চামচ মেথি বীজ নিয়ে পরিমাণ মতো পানিতে মিশিয়ে সেই পানিকে ফুটিয়ে নিন। এরপর বীজগুলোকে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি চায়ের মতো করে পান করুন। ১ সপ্তাহ এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে দেখবেন মুখের দুর্গন্ধ কমে গেছে।
  • মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে নারিকেল তেল: এই তেলে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য নিমেষেই মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। যার ফলে মুখের গন্ধ দূর হতে সময় লাগেনা।
  • আপেল সিডার ভিনেগার: এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত একাধিক উপকারী বৈশিষ্ট্য মুখে দুর্গন্ধ ভালো করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও নানান ভাবে সহায়তা করে। মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে ব্রেকফাস্টে, লাঞ্চে এবং ডিনারের পূর্বে অল্প পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করতে হবে।
  • এলাচ: ২ থেকে ৩টি এলাচ মুখে নিয়ে চিবিয়ে ফেলে দিন। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যেই মুখের গন্ধ একেবারে দূরে ভালো হয়ে যাবে।
  • বেকিং সোডা: শরীরের ভেতরে এসিড লেভেল ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে বেকিং সোডার কোনো বিকল্প হয়না বললেই চলে। তাই যদি আপনি মুখের গন্ধ সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে তা দূর করতে প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে সামান্য পরিমাণে বেকিং সোডা মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে মুখ কুলকুচি করুন। এতে করে উপকার পাওয়া মিলে।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে হলে জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। দাঁত ব্রাশ করলেই যে মুখের সকল জীবাণু চলে যাবে এমনটা নয়। যখনি দাঁত ব্রাশ করবেন তখন জিহ্বাটা পরিষ্কার করে নিবেন।
  • প্রতিদিন অন্তত দুই বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। কেননা খাবারের কণাগুলো দাঁতের ফাঁকে আটকে যায়। আর আটকানো খাবারের জন্মানো জীবাণু গুলো পরবর্তীতে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর অথবা দিনে অন্তত দুই বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ধূমপান পরিহার করুন। আপনি জানেন কি, ধূমপানের কারণে মুখে মারাত্মক আকারে দুর্গন্ধ হতে পারে। কেননা ধুমপানের ফলে মুখের ভেতর শুষ্ক হয়ে যায়। যার ফলে মুখের মধ্যে জন্মানো জীবাণুর পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকে। ফলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে ধূমপান পরিহার করা অতীব জরুরি।

উল্লেখিত পদ্ধতিগুলি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন উপকার পাবেন। তবে কোনো কিছুতেই যদি কোনো কাজ না হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

আরো পড়ুনঃ গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়

মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঔষধের নাম

  • অরোস্টার প্লাস – Orostar Plus
  • orostar cool mint mouthwash

মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে লেখকের শেষকথা

যেসকল কারণে মুখের মধ্যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়, সেসকল বিষয়ের প্রত্যেকটি আলোচনা এই পোস্টে আলোচনা করেছি। উপরোক্ত বিষয়গুলাে আমি বিভিন্ন মেডিকেল ওয়েবসাইট থেকে রিসার্চ করে বাহির করছি।

এখানে আমার নিজের কোনো মতামত নাই। আমি ডাক্তার এবং মেডিকেল সায়েন্স থেকে যেসকল তথ্য উপাত্ত পেয়েছি, সেই গুলোর উপর ভিত্তি করেই মূলত এই আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। আমি আশা করি এই উপরোক্ত কারণগুলি থেকে স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় খুঁজে আপনি আপনার উপর ব্যবহার করবেন। অর্থাৎ, উপরের কারণগুলি যেন আপনার ক্ষেত্রে না ঘটে, সেই দিকে আপনাকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

হুন্ডি কি? জানুন হুন্ডি ব্যবসা হালাল নাকি হারাম?

অনেকে হুন্ডি ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু এ বিষয়ে একটু দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে থাকেন তা হলো হুন্ডি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *