যোহরের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয়

যোহরের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয় ? এই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যকের পাঁচ ওয়াক্ত জাময়াতের সাথে নামাজ আদায় করা উচিত। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রত্যক মুসলমানের উপর ফরজ করা হয়েছে। নামাজ হচ্ছে জান্নাতের চাবি। তাই আমাদের প্রত্যক মুসলিমের নামাজ আদায় করা উচিত।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে যোহরের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। তবে চলুন জেনে নেই যোহরের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয় এই ব্যাপারে জেনে নেই।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

যোহরের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয়

যোহরের নামাজ সম্পর্কে কিছু কথা

প্রত্যক মুমিন মুসলমানের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রয়োজন। তার মধ্যে যোহরের নামাজ (সালাতুয যোহর) অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে মধ্যে যোহরের নামাজ দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সালাত।

যোহরের সালাত দুপুরের সময় আদায় করতে হয়। ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে। তাই আমরা যারা মুসলমান আছি তারা যোহরের নামাজ সহ বাকি নামাজগুলোও সঠিকভাবে জাময়াতের সাথে পড়ার চেষ্টা করব। এই পোস্টটি যোহরের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই আপনি পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

যোহরের নামাজ কয় রাকাত

যোহরের নামাজ সর্বমোট দশ রাকাত। (যোহরের নামায চার রাকাআত সুন্নাত, চার রাকাত ফরয ও এরপর দুই রাকাত সুন্নাত নিয়ে গঠিত। কেউ কেউ পরে দুই রাকাত নফল নামাজও আদায় করে। ফরজ অংশ ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে আদায় করা হয়। তবে ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় থাকলে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করতে পারে ও সুন্নাত আদায় নাও করতে পারে।) যোহরের নামাজ শেষের নফল ২ রাকাত সহ সর্বমোট ১২ রাকাত ও পড়া হয়।

চার রাকাত ফরজ জামায়াতের সাথে আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ শারীরিক সমস্যার কারণে মাঝে মধ্যে জামায়াতে উপস্থিত হতে না পারে। তবে সেক্ষেত্রে সে বাড়ি একাকী নামাজ আদায় করতে পারে। যোহরের ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত নামাজ আদায় করা ও ফরজ নামাজের শেষে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।

এছাড়াও আপনি চাইলে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে যোহরের নামাজের অবশ্যই আপনাকে চার রাকাত ফরজ সালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সা.) যদি যোহরের পূর্বে চার রাকাত না আদায় করতেন তবে যোহরের (ফরযের) পর তা আদায় করতেন। (তিরমিজি হাদিস নং ৪২৬)।

যোহরের সুন্নত নামাজ আদায় না করলে কোন গুনাহ হবে না। তবে তবে অনেকগুলা সাওয়াব হারানো যাচ্ছে। তাই চেষ্টা করতে হবে যোহরের ফরজ নামাজ শেষ সুন্নত নামাজগুলোও আদায় করা। শুক্রবারে যোহ্‌রের নামাজের পরিবর্তে জুম্মার নামায আদায় করা হয়।

যোহরের নামাজের সময়

সূর্য পশ্চিম দিকে ঢললেই যোহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং বস্তুর নিজস্ব ছায়ার এক গুণ হলে শেষ হয়। বাংলাদেশে সাধারণত দুপুর ১২টায় যোহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়।

যোহরের নামাজের নিয়ম – যোহরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়

যোহরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এই সমন্ধে আমাদের সকল মুসলমানের জেনে রাখা প্রয়োজন। তাই যদি আপনিও যোহরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তবে আজকের পোস্টের এই অংশটুকু ভালোভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ুন। নিচে যোহরের নামাজের নিয়ম উল্লেখ করা হলোঃ

অযুঃ প্রত্যক ফরজ সালাত বা অন্যন্য সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই অযু করতে হবে। কেননা অযু ছাড়া নামাজ আদায় করা যায় না। কারণ অযুর মাধ্যেমে আমরা পাকপবিত্র হই। তাই নামাজের আগে অবশ্য অযু করতে হবে। যোহরের নামাজের পূর্বে অবশ্যই অযু করতে হবে।

যোহরের নামাজ নিয়ত

যোহরের নামাজ শুরু করার আগে অবশ্যই নিয়ত করা প্রয়োজন। নিয়ত এর বাংলা অর্থ হলো সংকল্প করা। যোহরের নামাজের নিয়ত হলো: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

তাকবীরে তাহরীমা

অযু করার পর যোহরের সালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা শেষে বুকে বাধবে। এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখতে হবে অথবা বাম কব্জির উপরে ডান কব্জি রেখে বুকের উপর হাত বাঁধতে হবে। এরপর সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে ছানা পাঠ করতে হবে।

সূরায়ে ফাতিহা পাঠ

সানা পাঠ করার পর। আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে এবং অন্যান্য রাকাতে আউযুবিল্লাহ বাদে কেবল বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পড়বে। জেহরী সালাত হলে সূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে আমীন’ বলতে হবে।

কিরাআত

সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হলে প্রথম দু’রাকআতে কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তিলাওয়াত করবে। কিন্তু মুক্তাদী হলে জেহরী সালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়তে হবে ও ইমামের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।

রুকু

কিরাত পাঠ শেষ হলে এবার আল্লাহু আকবর বলে রুকুতে যেতে হবে। এ সময় হাঁটুর উপরে দু’হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকুর দোয়া ‘সুবহা-না রব্বিয়াল আযীম’ কমপক্ষে তিনবার পাঠ করতে হবে।

ক্বওমা

এরপর রুকু থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াতে। (রুকূ থেকে উঠে সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোকে ‘ক্বওমা’ বলে)। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে হবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’। এরপর কওমার দোয়া ’রব্বানা লাকাল হামদ’ পাঠ করতে হবে।

সিজদাহ

ক্বওমার দোয়া পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দুই হাটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশি বেশি সিজদার দোয়া পড়তে হবে। সিজদাহের দোয়া হলো সুবহানা রাব্বি আল আলা। এই দোয়াটি কমপক্ষে তিনবার পাঠ করতে হবে। এরপর সিজদার মাঝে এই দোয়াটি পাঠ করতে হবে আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি

বৈঠক

দ্বিতীয় রাকাত নামাজ শেষে বৈঠকে বসতে হবে। যদি প্রথম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ দোয়া পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে যাবে। আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরুদ শরীফ, দো’আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হলে বেশি বেশি করে অন্য দোয়া পড়তে হবে।

সালাম

দোয়ায়ে মাছুরাহ পাঠ করা হয়ে গেলে প্রথমে ডানে ও পরে বামে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে।

মোনাজাতঃ সালাত শেষ করার পর আপনি কিছু দোয়া ও ইস্তেগফার পাঠ করতে পারেন। আল্লাহর জিকির করতে পারেন। এছাড়াও আপনি দুনিয়া ও মাগফিরাতে জন্য আল্লাহর নিকট মোনাজাত করতে পারেন।

যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পূর্বে নিয়ত করা প্রয়োজন। যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত হলো:

আরবী উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার

বাংলা অর্থঃ যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার

যোহরের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয় ভিডিওতে দেখুন

যোহরের নামাজ কয় রাকাত

উপসংহারঃ যোহরের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয়

প্রত্যক মুসলমানের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং আল্লাহর সকল বিধি বিধান-নিষেধ মেনে চলা প্রয়োজন। কেননা ফরজ সালাত আদায় না করলে কবরে অনেক শাস্তি পেতে হবে। সুপ্রিয় মুসলমান ভাই বোনেরা, আজকে আমি আপনাদের সাথে যোহরের নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যদি এই পোস্টটি তথ্যবহুল হয় তবে আপনার মুসলিম বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ!

নামাজের জন্য ১০ টি সূরা | ১০ টি ছোট সূরা

মহানবী সা এর বিড়ালের নাম কি | নবীজির বিড়ালের নাম

কিস্তিতে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি কি

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

বায়ার কীটনাশকের সর্বশেষ মূল্য তালিকা ২০২৫ – সাশ্রয়ী দামে সেরা পণ্য

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এখানে প্রচুর শস্য ফলে। এছাড়াও নানান জাতের সবজি, ফুল ফল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *