সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় কি জেনে নিন

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে। যে বা যারা ইতোমধ্যে এই সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারা আজকের এই আর্টিকেলটি স্কিপ না করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কেননা আজ আমরা এমন কিছু উপায় সাজেস্ট করব যেগুলো মেনে চললে আপনি সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

সোরিয়াসিস কি

তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, যাদের কাছে সোরিয়াসিস রোগটি একেবারেই নতুন অথবা যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারা সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জেনে নিন এখনই। তো চলুন মূল আলোচনা পর্ব শুরু করা যাক।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

আপনি যদি সোরিয়াসিস রোগ সম্পর্কে সমস্ত বৃত্তান্ত জানতে চান অর্থাৎ সোরিয়াসিস রোগ কি, সোরিয়াসিস রোগের ঔষধ, সোরিয়াসিস কেন হয়, সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ, সোরিয়াসিস রোগের আধুনিক চিকিৎসা এবং এর খাবার তালিকা সেইসাথে সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সমূহ। তাহলে আমাদের আলোচনার মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে জেনে নিন এই রোগটির এ টু জেড।

আর হ্যাঁ, যারা স্বাস্থ্য ফিট রাখতে ব্যতিব্যস্ত এবং অন্যান্য জটিল রোগে ভুগছেন তারা চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের স্বাস্থ্য রিলেটেড আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন। কেননা ইতোমধ্যে বেশ কিছু আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে, যেগুলো আপনাদের জন্য উপকারী।

সোরিয়াসিস কি? সোরিয়াসিস কেন হয়?

সোরিয়াসিস হচ্ছে এক ধরনের জটিল চর্মরোগ, যেটাকে ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা বলে সম্বোধন করা হয়। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মূলত এই সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগটি হয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ, সোরিয়াসিস রোগটি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছেঃ ১। প্রচন্ডভাবে মানসিক আঘাত পাওয়া ২। গলায় সংক্রমণ ৩। ত্বক গভীরভাবে কেটে যাওয়া অথবা পুড়ে যাওয়া ৪। ধূমপান এবং মদ্যপানসহ প্রকৃতি।

তবে কখনো কখনো এই কারণগুলো ছাড়াও সোরিয়াসিস রোগ কে হয়ে থাকে মানব শরীরে। তাই এই রোগের নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা যাচ্ছে না। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন কখনো কখনো জিনগত বা বংশগত কারণেও এই রোগ হয়ে থাকে।

শুধু তাই নয়! সোরিয়াসিস হবার আরেকটি কারণ হচ্ছে অটো ইমিউনিটি এবং অতিরিক্ত ওজন। তাই যদি কখনো আপনার শরীরে এই রোগটি ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই নিজেদের ওজন কমিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন।

কেননা কোন ব্যক্তির শরীরে যদি এই রোগটি থেকে থাকে এবং সে যদি অতিরিক্ত মোটা হতে থাকে তাহলে সিরিয়াসিস ততটা পরিমাণেই দ্রুত বাড়তে থাকে। তাই অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করবেন দ্রুত।

আরো পড়ুনঃ সাহাবীদের নাম অর্থসহ ছেলেদের – পুরুষ সাহাবীদের নামের তালিকা অর্থসহ

সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় জানার পূর্বে সোরিয়াসিস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি সেগুলো অবগত হওয়া জরুরী। কেননা প্রত্যেকটি রোগের আলাদা আলাদা কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ পায় যেগুলোর উপর ভিত্তি করে আপনি সুনিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার সেই রোগটি হয়েছে।

তাই এ পর্যায়ে আমরা আপনাদেরকে জানাবো সোরিয়াসিস রোগে উপসর্গ হিসেবে শরীরে কোন কোন সমস্যাগুলো হতে পারে সে সম্পর্কে। যাদের শরীরে সোরিয়াসিস রোগ রয়েছে তাদের মূলত ১। ত্বকে লালচে দাগ পড়ে ২। ত্বক প্রচন্ডভাবে চুলকায় এবং ব্যথা হয় ৩। হাতের পায়ের আঙ্গুল ফুলে যায় এবং ব্যথা হয় ৪। পিঠ কোমর এবং হাটুতেও ব্যথা অনুভব হয়

আর বিশেষ করে মানুষের মাথায় মাছের আঁশ আকৃতির একটি লালচে চর্ম রোগের আবির্ভাব ঘটে এই রোগের কারণে। তাই সামান্য পরিমাণে যদি শরীরের কোথাও এমনটা হয়ে থাকে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।

আর আপনি যদি চান ঘরোয়া উপায়ে সোরিয়াসিস রোগ কে চিরতরে নির্মূল করবেন, তাহলে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত।

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় – মাথায় সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নিচে উল্লেখিত মাধ্যমগুলো অবলম্বন করতে পারেন। যথাঃ

১. পানিতে আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে সপ্তাহে তিন থেকে চারবার আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন।

২. সোরিয়াসিস রোগটি যদি মাথায় হয়ে থাকে তাহলে টি ট্রি ওয়েল মাথায় দারুন ভাবে মেসেজ করে পরবর্তীতে শ্যাম্পু করেও এই চর্মরোগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন।

৩. নিয়মিত ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথা ধুয়েও সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।

৪. মাথায় ঠান্ডা জাতীয় বিভিন্ন প্যাক লাগিয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় সোরিয়াসিস রোগ কে। 

৫. এসিড যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করার মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় সোরিয়াসিসকে।

৬. পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা মশ্চারাইজার আক্রান্ত স্থানে লাগিয়েও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

তবে হ্যাঁ সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসা সঠিকভাবে পেতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কেননা এই রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ক্ষতির বিষয় নির্ভর করে। তাই আপনার শরীরে সোরিয়াসিস রোগটি দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন এবং তাদের নির্দেশনা মোতাবেক ঔষধ সেবন করুন।

আর আরেকটি কথা না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে সচরাচর সোরিয়াসিস রোগটি শীতকালে হয়ে থাকে। তাই এ সময় নিজেকে পরিপাটি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি এই উপায় গুলো অবলম্বন করার পরবর্তীতেও আপনাকে সঠিক ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে। কেননা কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো সোরিয়াসিস রোগের মাত্রাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলের পরবর্তী পয়েন্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরো পড়ুনঃ সিস্ট কি? সিস্ট কি টিউমার – ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়

সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধি করে যেসকল খাবার

সোরিয়াসিস রোগ ছোঁয়াছে এক ধরনের চর্ম রোগ। আর এই রোগ যখন কারো শরীরে বাসা বাঁধে তখন কিছু কিছু খাবার খাওয়ার ফলে তার মাত্রা অধিকারে বেড়ে যায়। সে খাবারগুলো হচ্ছেঃ

১। লাল মাংস অর্থাৎ গরু খাসি হাঁস অথবা ফার্মের মুরগি।

২। দুগ্ধ জাতীয় খাবার, সেটা হতে পারে দই দুধ বা প্যাকেট জাতীয় কোন দুগ্ধ জাত পণ্য।

৩। রিফাইন্ড সুগার, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এটাও মূলত সোরিয়াসিস রোগ বৃদ্ধির খাবার গুলোর মধ্যে একটি।

সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম

এটি যেহেতু একটা চর্মরোগ তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই সোরিয়াসিস রোগের ক্রিমের নাম জানতে চান। আপনার যদি ঘরোয়া টিপস গুলো কাজে না লাগে এবং এই রোগ হওয়ার সময় উপরে উল্লেখিত খাবার দাবার এবং অন্যান্য নিয়ম কানুন মেনে চলেন তাহলে খুব দ্রুত সেরে যাবে বলে আশা করা যায়।

তবুও যদি সোরিয়াসিস রোগের সমস্যাটা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তাহলে এমনকি কোন ক্রিম রয়েছে যেটা ব্যবহার করা যাবে! তাদের কে বলব হ্যাঁ। আপনি মূলত ব্যবহার করতে পারবেন ক্লোভেট-এন মলমটি। কেননা এই মলমটি সোরিয়াসিস রোগের ক্ষেত্রে সাজেস্ট করা হয়। তবে চেষ্টা করবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত স্থানে ঔষধ বা মলম লাগানোর।

সোরিয়াসিস এর ইনজেকশন

সিরিয়াসিস রোগের চিকিৎসা মূলত এই রোগের ধরন, আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স, গুরুতর অবস্থা অর্থাৎ রোগের গভীরতার ওপর ভিত্তি করে সাজেস্ট করা হয়ে থাকে। সোরিয়াসিস এর জন্য সচরাচর বেশ কিছু ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। যেগুলো রিসার্চ করার মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছে। সেই ইনজেকশনগুলো হলোঃ

1. Adalimumab (ট্রেড নাম: Humira)

2. Etanercept (ট্রেড নাম: Enbrel)

3. Infliximab (ট্রেড নাম: Remicade)

4. Ustekinumab (ট্রেড নাম: Stelara)

5. Secukinumab (ট্রেড নাম: Cosentyx)

তবে হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা নিষেধাজ্ঞা প্রদান করব যে কখনোই এই ইনজেকশনগুলো নিজে নিজে সংগ্রহ করে পুশ করার সিদ্ধান্ত নেবেন না। যদি আপনার রোগের পরিসীমাটা দিন দিন বাড়তে থাকে তাহলে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে যান এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ বা ইনজেকশন নিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

সোরিয়াসিস এর আধুনিক চিকিৎসা

সোরিয়াসিস রোগ হলে সাধারণত মুখে খাবার ওষুধ ব্যবহার করা হয় প্রথম অবস্থায়। সেই ওষুধগুলো হলঃ ১। মিথোট্রেক্সেট ২। সাইক্লোস্পোরিন ৩। এসিট্রেসিন সহ প্রভৃতি।

তবে এই ঔষধ গুলো যখন সঠিকভাবে কাজ করে না ঠিক তখন চিকিৎসকরা আরো কিছু ওষুধ খাবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেগুলো হলোঃ ১। এডালিমুমাব ২। ইনফ্লিক্সিমাব ৩। ইটানারসেপ্ট 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: মনে রাখবেন এই প্রত্যেকটি ওষুধের রয়েছে জটিল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। তাই চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া ভুলেও এই ঔষধ সেবন করবেন না।

তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, যেহেতু রোগ জীবাণু মানব শরীরে বাসা বাঁধবে এটা স্বাভাবিক একটা নিয়ম। তাই যদি কখনো আপনার শরীরে সোরিয়াসিস রোগের আগমন ঘটে তাহলে ভয় পাওয়ার কোনই কারণ নেই। নিয়মিত ঘরোয়া টিপস গুলো প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এবং নির্দেশনা মাফিক ওষুধ সেবন করুন এবং পরিবর্তন নিয়ে আসুন নিজেদের লাইফ স্টাইলের।

মনে রাখবেন অস্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা প্রায় প্রত্যেকটি রোগের অন্যতম কারণ। তাই সবসময় শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান পরিমিত পানি গ্রহণ করুন এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে আবারো নতুন কোন আলোচনায় দেখা হবে কথা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

বিভিন্ন সংক্রমণজনিত রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায় ডক্সিক্যাপ ১০০ এর ব্যবহার ও কার্যকারিতা

Doxicap 100 হলো ডক্সিসাইক্লিনের একটি বাণিজ্যিক নাম, যা Tetracycline শ্রেণীর একটি শক্তিশালী ব্রড-স্পেকট্রাম এন্টিবায়োটিক মেডিসিন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *